শতবর্ষী স্কুল সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের নানা দলে বিভক্ত আর অনিয়মের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা। এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণে, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টে টাকা আদায় এবং দোকান ভাড়ার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তার অনুসারী কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অথচ ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শনিবার সরেজমিনে চৌগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্র ফি, সেশন ফি, উন্নয়ন ফি, বেতন, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদির নাম করে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর সাথে বাড়তি টাকা আদায় করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আর বোর্ড নির্ধারিত ফ্রি এর চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষোভ ও অনীহা দেখা যায়।
চৌগ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিরুপায় হয়ে ছেলের ফরম পূরণে ৩ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এসব কথা শুনে আপনারা কি করবেন? আমাদের তো বিপদে ফেলবেন না। শুনেছি স্কুলের আরো খরচ রয়েছে। অরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বজলু মন্ডল বলেন, তাকে ছেলের ফরম পূরণে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে। মাষ্টাররা নিলে কি বা করার আছে?
শিক্ষার্থীর অভিভাবক মকবুল হোসেন, আবু বকর, গৌড় কুন্ড, রেহেনা বেগমসহ অনেকে বলেন, সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কম দিতে ঝগড়া-ঝাটি করেও পারব না। আর আমরা কৃষক, গরীব মানুষ। যত জুলুম আমাদের কাছে। টাকার রশিদ চাইলে পরে দিবেন বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সবাইকে।
তবে ওই বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের এই দূরাবস্তা আমাদের দেখা-শোনা ছাড়া বলার কিছুই নেই। আর গরীব শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে তারা এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।
এবিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের সদ্য বিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলতাব হোসেন বলেন, আমার সময় এমন অনিয়ম ছিল না। তবে কতিপয় শিক্ষকের যোগসাজসে বিদ্যালয়ের এই দূরাবস্তা।
আর নবনির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বাবু মুঠোফোনে বলেন, আমি গতকাল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হলে এটা খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করেন তিনি।
তবে অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যা, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি কারণে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর অনেক প্রতিষ্ঠানই তো নিচ্ছে। তাই তারাও নিচ্ছেন। তিনি ওই পদে নিজেকে নতুন মানুষ উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক সহ কয়েক জনের পরামর্শ ক্রমেই এই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম.এম সামিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।