প্রায় ৭১ বছর পর বহু স্মৃতিবিজড়িত পুরাতন স্টেডিয়ামসংলগ্ন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার স্থানান্তরিত হলেও নানা সমস্যা স্থানান্তরিত হয়নি।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নবনির্মিত নতুন জেলা কারাগারে কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর সড়কের চৌ-রাস্তার ২৮ একর জায়গার ওপর ৭০ কোটি টাকায় নির্মিত হয়।
জেল সুপার বজলুর রশীদ জানান, নতুন কারগার কেন্দ্রীয় কারাগারের আদলে তৈরি করা হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চ, আধুনিক ২৪ শয্যার হাসপাতাল, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আধুনিক ভবন, কর্ম প্রশিক্ষণ ইউনিট থেকে খেলাধূলার প্রয়োজনীয় ইনডোর-আউটডোর সুবিধা রয়েছে। এর ফলে আসামিদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ বাড়বে। জীবন সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক ধারণ দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, কয়েদি থাকার জন্য ভবনের নাম রাখা হয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহী নদীর নামে- 'নরসুন্দা'। অন্য চারটি ভবনের নাম রাখা হয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভবনটির নাম রাখা হয়েছে 'হাওর বিলাস'।
১৯৪৮ সালে শহরের গাইটাল বটতলা এলাকায় মহকুমা কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। বহু স্মৃতিবিজড়িত পুরাতন কারগারে '৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭০ নির্বাচন ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটকে রাখা হয়। কমরেড নগেন সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একাধিকবার পুরাতন কারাগারে বন্দি ছিলেন।
কারাগারে বন্দি জেলা সদরের আকবর হোসেন ও রাজীবসহ আরও একাধিক বন্দি জানান, পুরাতন কারাগারে ২৪৩ জনের ধারণ ক্ষমতা ছিল। তাই তাদের অনেক সময় পালা করে ঘুমাতে হতো। এখন নতুন কারাগারে তাদের ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও কারাগারের ভেতরে শব্দ ও প্রচন্ড গরমে অতীষ্ট থাকতে হয়। রয়েছে পানিরও সমস্যা।
অপর দিকে সচেতন নাগরিক সমাজ জানিয়েছে কারাগারে ঘনঘন হাজতীদের মৃত্যু ভাবিয়ে তোলেছে হাজতীদেরকে। গতকালও গরমে স্টোক করে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে মো. শামীম (৩৫) নামে এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
জেল সুপার বজলুর রশীদ জানান, কারাগারে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজতীরা। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি গভীর পানির পাম্প স্থাপন করা হলেও তাতে পানি ওঠছে না। বিকল হয়ে পড়ে আছে পাম্প স্থাপনের দিন থেকেই। অতচ সচল দেখিয়ে বিল ওঠিয়ে নিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। হাজতীদের সমস্যা লাঘবে আমি নিজস্বভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে দুটি সেলু মেশিন দিয়ে কয়েক হাজার হাজতির পানির চাহিদা মিঠাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাহাদুর আলী জানান, দুটি পাম্প বিকল তা ঠিক নহে। ঈদুল ফিতরের আগে একটি পাম্প মেরামত করে চালু করে দিয়েছি। দ্বিতীয়টি মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।