তেল নিয়ে কারসাজির অভিযোগে রাজশাহী মহানগরী ও জেলার বাগমারা উপজেলায় পৃথক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানকালে তেল নিয়ে কারসাজির অভিযোগে রাজশাহী মহানগরীতে তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পৌণে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউন থেকে প্রায় ২৭ হাজার লিটার ভোজ্য তেল জব্দ শেষে ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় সেখানকার দুইটি গোডাউন সিল করে দেয়া হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পৃথকভাবে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, সয়াবিন তেল নিয়ে কারসাজির অভিযোগে রাজশাহী মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে তিন ব্যবসায়ীকে পৌণে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী ও সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফের নেতৃত্বে মঙ্গলবার (১০ মে) মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা আদায় করা হয়। পরে জরিমানাকৃত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পরিচালক হাসান আল মারুফ জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর সাহেব বাজার ও বহরমপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার মেসার্স হুমায়ুন স্টোরে ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল মজুদ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় তাকে ভোক্তাঅধিকার সংরক্ষণ আইনে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে জব্দকৃত ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি করে ওই ব্যবসায়ীকে টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রির দায়ে সাহেববাজার এলাকার মেসার্স পাপ্পু এ- ব্রাদার্সকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিকের নাম নজরুল ইসলাম। এরপর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি মূল্যে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির অপরাধে মহানগরীর সিটি বাইপাস বহরমপুর মোড় এলাকার মেসার্স নুরুন্নবি ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক নুরুন্নবী। আর জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী।
এদিকে, সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ হাজার লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সোয়াবিন তেল প্রায় ২০ হাজার লিটার এবং বাকিগুলো সরিষার তেল। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তেলের মালিক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্বপনকে (৪০)। তিনি চেওখালি গ্রামের ইসমাইল সাজির ছেলে। অভিযানের সময় স্বপনের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম কৌশলে পালিয়ে গেছে। জব্দকৃত তেলের মধ্যে ১৯ হাজার ১৭৬ লিটার সোয়াবিন ও ৭ হাজার ৫৪৮ লিটার সরিষার তেল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম মঙ্গলবার বিকেলে জানান, তাহেরপুর বাজারে একটি সরকারি গোডাউন রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেটি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে। ওই গোডাউনে টিসিবির পণ্য থাকতে পারে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০০ ড্রাম তেল পাওয়া যায়। যে ১০০ ড্রাম তেলের মধ্যে ৬৩ ড্রামে সোয়াবিন রয়েছে। এসব প্রতি ড্রামে তেল রয়েছে ২০৪ লিটার। সে হিসেবে সোয়াবিন তেল রয়েছে ১২ হাজার ৮৫২ লিটার। আর বাকি ৩৭ ড্রামে রয়েছে ৭ হাজার ৫৪৮ লিটার সরিষার তেল। পরে ওই স্থানের পাশে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার স্বপনের বড় ভাই রফিকুল ইসলামের আরেকটি গোডাউনে আরও ৩১ ড্রাম সোয়াবিন তেল পাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে ৬ হাজার ৩২৪ লিটার সোয়াবিন তেল। এ নিয়ে দুই গোডাউনে সোয়াবিন তেল পাওয়া গেছে ১৯ হাজার ১৭৬ লিটার। অভিযানকালে ওই দুইটি গোডাউন সিল করে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অভিযানকালে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম, পুঠিয়া সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস, বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহমেদ ও তাহেরপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ এসআই দিদারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।