বঙ্গোপসাগরের দিকে ধেয়ে আসা ঘূণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে যশোরের অভয়নগর উপজেলা জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে পড়েইে যাচ্ছে। হঠাৎ এ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের চাষিরা।
আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্প্রতিবার (১২মে) ঘূণিঝড় ‘অশনি’ সুপার সাইক্লোন হয়ে উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা আছে। এবং ‘অশনি’র প্রভাবে সাড়া দেশে ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টি পাত হবে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের অনেক পরিশ্রমের ফলন নিয়ে কৃষকের মুখে যেমন আনন্দ বিরাজ করছে তেমনি প্রাকৃতিক এ দূর্যোগ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফসলে অনেক ক্ষতি হবে বলে জনা গেছে। উপজেলার বাগুটিয় গ্রামের বোর ধান চাষী প্রদ্বিপ কুমার শীল কৃষকদের এই স্বপ্ন ও বৃষ্টিপাতে ধানের ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাগুটিয়া ভুরভুরে বিলে আড়াই বিঘা জমিতে বোর ধানের চাষ করে ছিলাম। ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে আশা ছিল খরচ পুশিয়ে নিয়ে লাভবান হবো। কিন্তু এ বৃষ্টিপাতের কারণে সেই আশা আর নেই। বৃষ্টির পূর্বে ৬০ভাগ ধান কেটে বাড়ী তুলতে পেরেছি। ৪০ভাগ ধান বিলে আছে এর মধ্যে বেশী টাকা দিয়ে (কৃষান) ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে প্রায় ২৫ভাগ ধান কেটে উঁচু স্থানে রেখেছি। বাকি ধনি পানিতে ভাসছে। নওয়াপাড়া বুইকারা গ্রামের কৃষক নূর-মোহাম্মাদ মল্লিক বলেন, আমি ২বিঘা জমিতে বোর ধানের চাষ করে ছিলাম। আল্লাহর রহমাতে ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে আধাপাকা ধান পানিতে নুয়ে পড়ায় আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বেশী টাকা দিয়ে কৃষন নিয়ে জমির অর্ধেক ধান কেটে এনেছি। বাকি ধান মাঠেই আছে। এ উপজেলার ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে চলশিয়া, পায়রা ও সুন্দলী ইউনিয়ন। এ অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের মরণফাঁদ দু:খ্য খ্যাত ভবদহ গ্রাসের কারণে ইউনিয়নের দুটি নি¤œাঞ্চলে এ বছর প্লাবিত থাকায় বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে। কৃষক বিমল রায় বলেন, কষ্টের মাঝেও কিছু বিলে বোর ধানের চাষ করা হয়েছিল কিন্তু এ যেন মরার উপড়ে খাড়ার ঘা। ভবদহের জলাবদ্ধতা ও হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে বিলে মাঠের ধান পানিতে ডুবে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কষ্টো অর্জিত টাকা দিয়ে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল যদি বাড়ী তুলতে না পারি তাহলে আমরা একবারে পথে বসে যাবো। অপরদিকে অশনি’র করনে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তারা আরও বলেন, এ সময় দেশের উত্তর অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আসতেন। কিন্তু এ বছর লোকজন কম আসার কারণে (শ্রমিক)কিষানের দিনমজুরি বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে তেমনি ধানকাটা কৃষাণ সংকট দেখা দিয়েছে। সময়মতো কিষাণ না পেলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস তথ্যমতে অভয়নগরে ৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় ১৩ হাজার ১শ ২৫ হেক্টর ফসলি জমি। এ বছর ১২হাজার ১শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ছিল ৯হাজার ৩শ ৪০ মেট্রিকটন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের বোর ধান উৎপাদনের শতকরা ৭৫ভাগ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। তবে ঘূণিঝড় অশনি’র কারণে ঝড়ে হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হওয়ায় শতকরা ২৫ভাগ ধান মাঠ বিলে আছে। এবং শতকরা ১ভাগ ধান মাঠে কাটা আছে। কাটা ধান মাঠের আইলে(পারে) বা উঁচু স্থানে রাখার জন্য কৃষকদের বলেছি এবং বৃষ্টি থামলে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে আমি কৃষকদের কাছে এসে সরোজমিনে গিয়ে তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। ঝড়ো বৃষ্টিতে যে সকল মাঠ বিলের ধান পানিতে নুয়ে(সুয়ে) পরেছে সে সকল কৃষকদের বৃষ্টি কমলে ধান কাটতে বলছি। এবং বৃষ্টি একটু থেমে গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের ধান কেটে উঁচু স্থান ও বাড়ীতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ ধান কেটে কৃষরা বাড়ী তুলতে পারলে তেমন কোন ক্ষতি হবেনা।