বর্ষা মৌসুম আসার আগেই রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর বাইরেও অনেকে আছেন, যারা বুঝে উঠতে পারছেন না যে তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে না পারলে রোগটি এবার ভয়াবহ রূপ নেবে। এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে বলেও তারা মনে করছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ‘প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপে পাওয়া গেছে, রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবার ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ওদিকে রাজধানীর দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গু নিয়ে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ডেঙ্গু চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল, চিকিৎসা সামগ্রীও অপ্রতুল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাখ লাখ টাকা খরচ করার পরও আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন অনিশ্চিত থেকে যায়। এ অবস্থায় চিকিৎসার চেয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে বেশি। ২০২২ সালে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা জন্মানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বহুগুণ বেশি। জরিপে আরও উঠে এসেছে, ২০২০ ও ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে বৃষ্টিপূর্ব এডিসের ঘনত্ব বহুগুণ বেশি। ফলে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ সচেতনতা থাকতে হবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতার বিষয়ে বেশি বেশি প্রচার চালাতে হবে। পরিবার পর্যায়ে মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে দরজা-জানালায় অস্থায়ী নেটও লাগানো যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সময়ে কারও জ¦র হলে ডেঙ্গুর সম্ভাবনা মাথায় রেখেই চিকৎসা করাতে হবে। রক্তসহ যা যা দরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু যদি কারও একবারের বেশি হয়, তাহলে জ¦রের তীব্রতার সঙ্গে সার্বিক জটিলতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, বলা যায় সেখানে ডেঙ্গু একপ্রকার নির্মূলই হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা পারছি না কেন? নিশ্চয়ই আমাদের চেষ্টার কোথাও না কোথাও গলদ রয়েছে। সেই গলদ দূর করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনসহ সাধারণ মানুষের সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি।