মহামারি করোনায় অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ^ব্যাপী মুদ্রাস্ফিতি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে খাদ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জনমনে দেশে দেশে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। বিষয়টি জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনুধাবন করতে পেরে বলছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতিরি কারণে এবছর বিভিন্ন দেশে নাগরিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। আর এ থেকে বাদ যাবেনা অর্থনীতিতে উদীয়মান দেশগুলো। এজন্য আলাদা ভাবে নজর দিতে বলা হয়েচে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মিসর, তিউনিসিয়া, লেবানন, সেনেগাল, কেনিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের দিকে।
শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেখানে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। জনরোশের কারণে সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রি সভার অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। কয়েক মাস আগে কাজাকিস্তানেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। কাজেই মানুষের পেটে ক্ষুধা নিবারনের জন্য যখন খাওয়া পাওয়া যাবেনা বা কিনতে পারবেন না, তখন জনঅসন্তোস থামানো সম্ভব হয়না। জাঁতি সংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি বলেছেন, যে সব দেশে সামাজিক নিরাপত্তার জাল নেই, সেখানে চরম রাজনৈতিক শক্তিগুলো এ পরিস্থির সুযোগ নিতে পারে। এরপর সেখানে দূর্ভিক্ষ হবে, দাঙ্গা হবে, আর আনিবার্য ভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিনতিতে গণঅভিবাসন ঘটবে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশে^র বিভিন্ন দেশে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ। এতে আবার এক অঞ্চলের ক্ষুধার্ত শিশুর মুখের গ্রাস আরেক অঞ্চলের ক্ষুধার্ত মরনাপন্ন শিশুর মুখে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে একেক দেশের খাদ্য মুল্যস্ফীতি একেক ভাবে অনুভুত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা হয়তো নেটফ্লিক্স দেখা ছেড়ে দেবে, সেই অর্থ বাঁচিয়ে তারা খাবার কিনতে পারবে। কিন্তু আফ্রিকার দেশ চাদ, মালি ও ইথিওটিয়ার মানুষের কি হবে, তাদের তো দূর্দশার শেষ থাকবে না।
বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যেও বাড়ছে হু হু করে। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে মাছ, মাংশ, মুরগি শাক সবজি সব কিছুরই উচ্চ মূল্য। এসব কিনে খেতে মানুষ হিমসিম খাচ্ছে। আমদানি করা নিজ পন্যগুলোর রপাতানি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বন্ধ ঘোষণা করছে তাদের নিজস্ব খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেল ও পাম তেল রপ্তানি শতভাগ বন্ধ করেছে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া। বেসসকারি খাতে গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। কাজেই এখন বেশি দামে খাদ্য পন্য পাওয়া যাচ্ছে, আগামী দিনে তা না পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। এমন পূর্বাভাশ জাতিসংঘেরও।
দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো খাদ্য পন্যের দাম বাড়ায় সরকারের সমালোচনা করছে। জনরোশ যে বাড়ছে না, তা বলা যাবে না। এরপরও বলতে হচ্ছে, কখন কি ঘটে যায় ? সৈরাচার খ্যাত এরশাদ সাত বছর অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ৯০ এর গণ অভ্যুর্থানে তার পতন হয়। কাজেই সরকারের সাবধানী পদক্ষেপ জরুরি।