বড়াইগ্রাম উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা নাটোর-পাবনা-খুলনা মহাসড়ক এবং বনপাড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা মহাসড়কের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা যেন মৃত্যু কুপে পরিণত হয়েছে। গত ১১ দিনে এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যেই একটি দুর্ঘটনাতেই আপন ভাই-বোনসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৪-৫ জন পঙ্গুত্বের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘন ঘন আকা-বাঁকা বাঁকের পাশাপাশি মাত্র দুই লেনের সরু মহাসড়কে বিপুল পরিমাণ যানবাহনের চাপ, মহাসড়কে উঁচু ঢিবি ও সরু ড্রেনের অস্তিত্ত্বসহ বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়ক দুটি চার লেনে উন্নীত করাসহ হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধির দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, বুধবার (১৮ মে) ভোর রাত ৩টার দিকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের উপজেলার কয়েন কবরস্থান এলাকায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের চালক মনিরুজ্জামান (৩৬) ও যাত্রী আল মাহবুব (৪২) নিহত হন। নিহত মনিরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তালতলা পশুরহাট এলাকার আছির উদ্দিনের ছেলে ও আল মাহবুব একই উপজেলার গহরপাড়া গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে। এ দুর্ঘটনায় আরো তিনজন আহত হন। ১৭ মে বনপাড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা মহাসড়কের বড়াইগ্রাম থানার মোড় এলাকায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের চালক যশোরের দেওগাছি এলাকার আব্দুল মালেক দফাদারের ছেলে লিটন দফাদার (৪২) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় চালকের সহকারী গুরুতর আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গত ৭ মে সকাল ১১ টায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রামের গাজী অটো রাইচ মিলের সামনে। এদিন ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ ও সিয়াম স্পেশাল নামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাস্থলে ৬ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজন মিলিয়ে মোট সাতজন নিহত হয়। এই দুর্ঘটনায় আহত হয় ৩০ জন যাত্রী। এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- নিহতরা হলেন-নাটোর সদরের পাইকোরদোল গ্রামের প্রবাসী শাহজাহান আলীর কলেজ পড়-য়া ছেলে কাওসার আহমেদ (২০) ও তার ছোট বোন সাদিয়া খাতুন (১৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমদাদুল হকের ছেলে ও নাটোর সরকারী এনএস কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান (৪৫), জেলার লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোহনা আক্তার মিলি (২৪), মাগুরা সদরের সিংহডাঙ্গা গ্রামের সাদেক বিশ্বাসের ছেলে প্রকৌশলী মিজানুর রহমান (৩০), রাজশাহীর চারঘাটের রাকিব হোসেনের ছেলে রোহান আহম্মেদ (১৬) ও পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে ইনসান আলী (৬০)।
ওই দুর্ঘটনায় সিয়াম গাড়ির চালকের ডান পা ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালকের সহকারি রবিউল ইসলামের বাঁ হাত বিছিন্ন হয়ে যাওয়াসহ ৫ যাত্রী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। একই দিন সন্ধ্যায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কের বনপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পৃথক দুর্ঘটনায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ব্র্যাক ব্যাংকের পাবনা শাখার কর্মকর্তা শামীম আহমেদ (২৮) মারা যান।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, যানবাহনের চাপ অনেক বেশি হওয়ায় মহাসড়ক দুটি চারলেনে উন্নীত করা জরুরী। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপুর্ণ জায়গাগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করা দরকার।