প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ ও দুর্নীর্তির তদন্তের দাবিতে রাজশাহীর বাগমারার হামিরকুৎসা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। প্রধানশিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করে। খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুসারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও এক ছাত্রীকে উদ্ধার করে। এ সময় প্রধান শিক্ষকের অনুসারীদের হামলায় পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঘটনাটি স্থানীয় একটি ওয়েব পোর্টালের ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে এক সাংবাদিককে লাঞ্চিত ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষক ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এনিয়ে আগামী শনিবার বসে সমাধান করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ২০-২৫জন শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে যায়। এ সময় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে একজন ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তিন বছর আগে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা হিসাবে নেওয়া সাড়ে চার লাখ টাকার হিসাব চায়। ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিজিটাল হাজিরার মেশিন কেনার জন্য সাড়ে চার লাখ টাকা চাঁদা হিসাবে নেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থী ৩৫০ টাকা করে চাঁদা হিসাবে ওই পরিমান টাকা দিয়েছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেন কেনা হয়নি এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চায় শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি অতীত বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রী ও অভিভাবকসহ প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে তারা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উপস্থাপন করে শ্লোগান দিতে থাকে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও যোগ দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের অনুসারী বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে ঢুকে কক্ষের তালা ভেঙে মুক্ত করেন। বিক্ষোভ করা পাঁচজন শিক্ষার্থীকে চড় থাপ্পড় মারেন বহিরাগতরা। ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় ওয়েবপোর্টাল ‘দৈনিক বাগমারা’র সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন। এ সময় প্রধান শিক্ষকের লোকজন তাঁকে লাঞ্চিত করে মুঠোফোনে কেড়ে নেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে ফোন ফেরত দেওয়া হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নবম শ্রেণির ছাত্রী নোমান হোসেন, রাব্বি হোসেনসহ ছয়জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন না করে প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলার কারণে কক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ তিনি বিদ্যালয়ের কক্ষ ভাড়া দিয়ে পকেট ভরছেন। তিনি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে এসব অনিয়ম করছেন। বহিরাগতদের দিয়ে তাদের পেটানো হয়েছে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ক্ষত দেখায়। তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার দাবি করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের কথা স্বীকার করে বলেন, যে টাকা উঠানো হয়েছিল, তা অতীত। এটা নিয়ে আর আলোচনা বা কথা বলতে চাননি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করার দাবি জানিয়েছিল। তিনি তাতে আপত্তি জানালে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে। তবে বহিরাগতদের দিয়ে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।