চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল কুজনসহ তাঁর সংলগ্ন বিল এলাকায় উজানের পানি নেমে আসায় প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে উপজেলায় এবার ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ধানকাটার শেষ মুহুর্তে কৃষকের হাহাকার পরিস্থিতি। ধান কাটা শ্রমিক পাচ্ছেনা। অতিরিক্ত হারে শ্রমিক ও নৌকার ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি। এদিকে বিলের পানি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাওয়ার আরো শতশত হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে। কৃষক ও এলাকাবাসীর দাবি পূণর্ভবা নদী খননসহ বিলকুজইন ঘাটে স্লুইসগেট বা সেতু নির্মাণ করা হউক।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন থেকে পূণর্ভবা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিলের নিমাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকার নিমজ্জিত ধানগুলো উজানের ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কৃষকের মধ্যে চলছে হাহাকার। যে যতটুকু পারছে ধান কেটে উঁচু জায়গায় রাখছেন। তবে শ্রমিক সংকটে অনেকে ডুবে যাওয়ার পাকা ধান কাটতে পারছেনা।সীমান্তবর্তী এলাকার বিল কুজন, সুকডোবা, দুবইলনাইন, চন্দের বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের জমির পাকা ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এত দ্রুত পানি বিলে ঢুকে পড়লে কৃষকরা সময়মত ধান কাটতে পারেননি। অনেকে ডুব মেরে ধানের শীষ কাটছে। যারা ভিজে ধান কেটেছে তাঁদের অনেকের ধান গেজে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বিল গুলোতে ১৬৭০ হেক্টর জমি রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৪শ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে।
চেরাডাঙ্গার গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তাঁর ৭বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাকি ৫ বিঘা জমি কেটে আনতে পারছিনা ব্রিজ না থাকার কারণে।
আরেক কৃষক রবিউল জানান, কুজইন বিলে সাড়ে ৫ বিঘার জমির ধান কেটে জমিতে রাখা ছিল। কোন কিছু বুঝার আগে ঢলের পানিতে তাঁর ধান তলিয়ে গেছে। তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাঁরমত অনেকের একই অবস্থা দেখা গেছে।
ধানকাটা শ্রমিক জাব্বার জানান, ভোলাহাট উপজেলা থেকে ধান কাটতে এসেছি। ৯শ টাকা করে দিনমজুরের কাজ করছেন। এ ছাড়া নৌকায় ধান নিয়ে আসতে ৭শ টাকা থেকে হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে।
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কুজন ঘাটে একটি ব্রিজ বা স্লুইসগেট তৈরি হলে প্রতিবছরের মত এ অবস্থা হত না। তাঁরা চান এ অঞ্চলের কৃষকের দূরাবস্থার কথা মাথায় রেখে দ্রুত এর সমাধানের ব্যবস্থা করা হউক।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, কৃষকরা দিনরাত বিলের ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পারছেন। তাঁরও ২২ বিঘার জমির ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সরকার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তিনি কৃষকের দূরাবস্থা দেখেছেন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এমকেএম গালিভ খান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সহায়তা দেয়া হবে। এলাকায় জনগন ও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে একটি স্লুইসগেট ও সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি।