বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। করোনা মহামারির দুই বছরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। ২০০৮ সালে যে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তা-ও সামলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সরকারের কার্যকর আর্থিক ও রাজস্ব নীতি তখন সংকট মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, সেই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে একটু বেগ পেতেই হবে। বাংলাদেশকে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সরবরাহ সংকট বাড়তে থাকায় খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এর পরও চাহিদা অনুযায়ী তা পাওয়া যাচ্ছে না। মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা সামাল দিতে এক দিন আগেই দুই মাসে তৃতীয়বারের মতো ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের চড়া দামে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে। রপ্তানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় জ¦ালানি তেল, ভোজ্য তেল, সার, গমসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। এর ফলে দেখা দিচ্ছে মূল্যস্ফীতিও। মূল্যস্ফীতির কারণে বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। উন্নত দেশগুলো মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নীতিনির্ধারণী সুদের হার কমালেও বাংলাদেশের পক্ষে সুদহার কমানো সম্ভব নয়। ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে বিশ্বজুড়ে চাহিদা বাড়ায় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় খরচ বেড়ে যায়। তাতে ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের মুদ্রা টাকাও ডলারের বিপরীতে দর হারাতে থাকে। তাঁদের ধারণা, খুব শিগগির ডলারের দর একটা জায়গায় স্থিতিশীল হবে না। কারণ একদিকে তেল আমদানিসহ আমদানি ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স সেভাবে বাড়েনি। ওদিকে আমদানি ও অন্যান্য প্রয়োজনে ডলার খরচ যত বাড়ছে, তত টান পড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। গত বছর আগস্টেই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮.০২ বিলিয়ন ডলার ছিল রিজার্ভে। এরপর কমতে কমতে তা ৪১ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে। হঠাৎ এ ধরনের সংকট দেখা দিল কেন? কারণ হচ্ছে, দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাস আয় দিয়ে তা মিটছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী দিনে উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সাশ্রয়ী হতে হবে। জোরদার করতে হবে রাজস্ব সংগ্রহ। তাঁরা মনে করেন, ডলারের বাজার স্বাভাবিক করতে আমদানিতে লাগাম টানা ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হারে যে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে মুদ্রার আরো অবমূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।