দেশের দ্বিতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিঘ্রই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমইউ)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প এ মাসেই একনেকে ওঠার কথা রয়েছে। শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল। দেশের উত্তরাঞ্চলে মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুই ধাপে সম্পন্ন হবে প্রকল্প। প্রথম ধাপে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।
প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ করা হবে। আর ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে সেবার পরিসর বাড়বে কয়েক গুণ। বিশেষায়িত ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে এ হাসপাতাল। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে রাজশাহী মহানগরীতে ৬৮ একর জায়গায় ওপর।
জানা গেছে, ৬৯টি বিভাগের কলেবরে বিস্তৃত হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আরএমইউর রেজিস্ট্রার অফিস নির্ধারিত কাজ দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করায় ৮০টি মেডিকেল, নার্সিং, ডেন্টাল কলেজ এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (আরএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। অনুমোদন পেলে খুব শিগগির অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষক, পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মীরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট যে হিসাব বিভাগে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবলের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। কলেজ পরিদর্শন সংক্রান্ত কাজও হালনাগাদ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের নিয়োগের ফলে কাজে গতিশীলতা এসেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদিত বিধি অনুসরণের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও বরাদ্দের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমনকি কভিড-১৯ মহামারির সময় ব্যাহত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমও কাটিয়ে উঠেছি। মূলত, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভাগে অভিজ্ঞ ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে আরএমইউ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রায় এক বছর এগিয়ে আছে। এখন চিকিৎসকের পাশাপাশি দক্ষ নার্স তৈরির জন্য ক্যাম্পাসে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা (অ.দা.) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিকে আরএমইউর আওতাধীন করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৩টি সরকারি, ১৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। দুটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, ছয়টি সরকারি ও ৩১টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ, একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং ৭৪টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তিনি বলেন, আরএমইউ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সফলভাবে এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) কোর্স সফলভাবে পরিচালনা করছে। ডাটা এন্ট্রি, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সব কার্যক্রম ডিজিটালভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে এই প্রথম রামেবিতে শুরু থেকে কোডিং ডিকোডিং পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিচ্ছে প্রথম পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করছে যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীন পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর কোর্সও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।