যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলায় অভিযুক্ত লিখন সাকসেনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। সে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাগাইয়া গ্রামের মো: হুমায়ুন কবীরের ছেলে। ওই মামলার প্রধান আসামি লিখন সাকসেনাকে বুধবার রাতে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এম এ মোর্শেদের (পিপিএম) নেতৃত্বে ও ভৈরব থানা পুলিশের সহযোগিতায় অভিযুক্ত আসামীর নিজ বাড়ি ছাগাইয়া থেকে গ্রেফতার করেন এবং পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তার অপর দুই ভাই হৃদয় সাকসেনা ও অনন্ত সাকসেনাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানা পুলিশ। হৃদয় সাকসেনা মামলার ৪নং আসামী। আর অনন্ত সাকসেনা বাদীর বাসার দরজা ভাংচুরের ঘটনার অভিযোগে থানায় আটক আছে। গ্রেফতারকৃত লিখন সাকসেনাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং হৃদয় সাকসেনাকে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়াও শশুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ও তার সহধর্মিণী শেওলী শ্রাবণীসহ আরো দুই ছেলে, হৃদয় সাকসেনা ও অনন্ত সাকসেনাকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
লালবাগ থানা মামলা নং-৬, তারিখ: ১৪/০৫/২০২২খ্রি. ধারা: ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১ (গ)/৩০। মামলার ২নং আসামি ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী ৩নং আসামি শিউলী শ্রাবনী মামলার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২০২১ সালের ৪ জুন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী লিখন সাকসেনা বিবাহ হন। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে প্রায় সময়ই মারধর ও মানসিক নির্যাতন করতেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় বাড়ি থেকে দাবিকৃত যৌতুকের ১০ লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকা তার স্বামীকে যৌতুক এনে দেন। পরবর্তীতে স্বামী লিখন সাকসেনা ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে প্রাণপন চেষ্টা করছেন। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল দুপুরে যৌতুকের টাকার জন্য অভিযুক্তরা বাদী ভুক্তভোগী নববধূ স্ত্রীকে মারধর করে আহত করেন বলে এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়।
এবিষয়ে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ মোর্শেদ মুঠোফোনে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার আসামি লিখন সাকসেনাকে ভৈরবের ছাগাইয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও তার দুই ভাইকে আটক করি। তারমধ্যে হৃদয় সাকসেনা মামলার ৪ নম্বর আসামী। এবং তার ছোটভাই অনন্তকে বাদীর বাসার দরজা ভাংচুরের অভিযোগ পেয়ে আটক করি। তিনি আরো বলেন, লিখনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে আসামীদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। শুক্রবার মামলার অপর আসামি হৃদয়কে আদালতে হাজির করা হবে। এছাড়াও মামলার অন্য দুই আসামি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও তার সহধর্মিণী শেওলী শ্রাবণী কে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে মামলার বাদী সাকসেনার স্ত্রী মুঠোফোনে বলেন, যৌতুকের টাকার জন্য লিখন বিভিন্ন সময়ে আমাকে চড়, থাপ্পড়সহ নানাভাবে মারধর করে আসছিল। আমাকে রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে স্বামী লিখন সাকসেনা ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে আমাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে প্রাণপন চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আমি সবকিছু সহ্য করে দুই লাখ টাকা দেই। আমি এর বিচার চাই।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির এর সাথে যোগাযো করা যায়নি।