দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দফায় দফায় গরুর খাবারের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ছয় মাস আগে যে গমের ভুষি ছিল ৮০০ টাকা মণ পাওয়া যেতো সেই ভুষি এখন তা এক হাজার ৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন এবং অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন।
আর গো-খাদ্যের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজি এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খামারের দায়িত্বে নিয়োজিত চকচকা গ্রামের বিষু সরকার বলেন, এখন আর গরু পালার কোনো সুযোগ নেই। ছয় মাস আগে যে গমের ভুষি কিনেছি ৮০০ টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকায়। আগে যে ভুট্টার গুড়া কিনেছি এক হাজার ২০০ টাকায়। এখন তা নিতে হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টাকায়। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে এক হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়। আর সয়াবিনের দাম এত বেশি যে আমরা এখন গরুকে তা খাওয়াচ্ছি না।
ফুলবাড়ী উন্নত জাতের ঘাস চাষের বিষয়টি এখনও খুব একটা বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও বাজারে ঘাসের দামও চড়া। যে কারণে এ অঞ্চলের খামারিরা খড় ও দানাদার খাবার খাইয়েই গবাদি পশু পালন করেন। তবে দানাদার খাবারের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেকেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন।
ফুলবাড়ী পৌর শহরের চকচকা গ্রামের ধরম চাঁদ গুপ্ত বলেন, তার পারিবারিক খামারে ছোটবড় আটটি দুধের গাভি ছিল। গো-খাদ্যের দামের কারণে ইতোমধ্যে চারটি গাভি বিক্রি করে দিয়েছেন। অন্যগুলোও পালন করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ছোটবড় অন্তত দুই হাজার ৩২৫টি গরুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি প্রাণি সম্পদক দপ্তরের নিবন্ধিত।
ফুলবাড়ী উপজেলা ডেইরি খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, হঠাৎ করে গো-খাদ্যেও দাম বাড়িয়ে দেওয়া খামারীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে খামারিদের পথে বসতে হবে।
পৌর শহরের বাজার এলাকার গো-খাদ্য বিক্রেতা সচল প্রসাদ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে যখন গমের দাম বাড়ল সেই থেকে গমের ভুষির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেল। এ ছাড়া যখনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল সে সময় থেকে সয়ামিলের ভুষির দামও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও ভুট্টার বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সারাবিশ্বেই খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কীভাবে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এজন্য খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের ঘাস চাষে সহযোগিতাও করবে। পাশাপাশি যেসব খামারি আগামী কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন তাদের জন্য ইউরিয়ার মোলাসেস তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।