নীলফামারীর সৈয়দপুর এখন তামাক পাতায় তৈরি বিষাক্ত ক্ষতিকর গুলের শহর। শহরের বাঁশবাড়িতে খালেদ গুল কারখানা, নতুন বাবু পাড়ার হাজী কলোনি এলাকায় তারিক গুল কারখানা, মিস্ত্রিপাড়ায় ওয়ান স্টার ও টু স্টার ফ্যাক্টরীসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক গুল কারখানা। এসব কারখাতে তামাক পাতা গুড়ো করার সময় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ঝাঁঝালো গন্ধ। ওই এলাকা দিয়ে যে কোন লোক চলাচল করলে তার চোখ দিয়ে এমনিতেই পানি ঝরতে থাকে। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তারকারী এসব গুল কারখানাগুলোর অবস্থান আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন স্থানে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। ওই এলাকার পরিবেশ হয়ে পড়েছে বিষাক্ত ও দূষণযুক্ত। ফলে শিশুদের যক্ষ্মা, হুপিং কাশিসহ চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে অহরহ। হাজী কলোনীর একজন এনজিও কর্মকর্তা জানান, কাশিতে আক্রান্ত তার ২ বছরের বাচ্চাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি দূষিত ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দেন। গুল ফ্যাক্টরীগুলোর মতো যোগ হয়েছে পোল্ট্রি ফার্ম ও চিপ্স ফ্যাক্টরীসহ বেশ কয়েকটি মিল কারখানা। এসব ফ্যাক্টরীর বর্জ্যসহ রাসায়নিক বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় এলাকার জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাভাবিকভাবে বসবাস করাও দূরহ হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে রোগ ব্যাধিসহ নানা সমস্যা। সরেজমিনে বিভিন্ন গুল ফ্যাক্টরীগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার শ্রমিক বলতে স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা ও শিশুরাই বেশি। নামমাত্র মজুরির বিনিময়ে তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুল তৈরি করে। এসব গুল ফ্যাক্টরীগুলোর মালিকরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেন না এলাকাবাসী। দিনের পর দিন নিরবে সহ্য করে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। এমন কথা জানালেন বাঁশবাড়ী এলাকার একজন শিক্ষক। পরিবেশের সার্টিফিকেট ছাড়াই ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে এসব গুল ফ্যাক্টরী। মজার বিষয় হচ্ছে পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে পৌর কতৃর্পক্ষ। গুলের ডিব্বা তৈরির ক্ষেত্রে আবর্জনার স্তুপ থেকে কুড়িয়ে আনা পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আবদুর রহিম বলেন,তামাক পাতার গুড়ো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাছাড়া এটি ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আতিকুজ্জামান বলেন তামাকের গুড়ো চোখে পড়লে চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সৈয়দপুর কাচামাল আড়তের অনেক ব্যবসায়ি জানান,তারিক গুল কারখানার তামাক পাতার গুড়ো ভাসছে বাতাসে। প্রতিদিন এ অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা নাকে মুখে কাপড় বেঁধে কষ্ঠ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। এ বিষয়টি সরকারী লোকজন কেন যেন দেখিও না দেখার ভান করে চলছে।
এ ব্যাপারে তারিক গুল কারখানার মালিক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দীককে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল রিসিফ করেননি। ফলে তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসী দাবী তুলেছে,অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গুল ফ্যাক্টরীগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হুসাইন বলেন এলাকার লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর থেকে জানানো হয় কারো কোম্পানিতে যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন যদি কোন কোম্পানি মালিক তার কোম্পানি থেকে মানবদেহ এবং পরিবেশ দুষিত হয় এমন ক্ষতিকর উপকরণ ছড়ায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।