জামালপুরের মেলান্দহে ছিন্নমূল মানুষদের বসতির জন্য জমি লিখে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন বাদশা দোজাহান মতি মেম্বারের দম্পতি। তিনি ৮নং ফুলকোচা ইউপি’র রেখিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। কিংবদন্তী আছে জমিদার ছত্রিশ চন্দ্র রায় বাহাদুরের রাজকর্মচারি রেখরি মন্ডলের নামানুসারে রেখির পাড়ার নামকরণ হয়। মতি মেম্বার এই রেখরি মন্ডলের বংশধর। গরিব-অসহায় এবং বাস্তুহারা মানুষের ভাসমান জীবন যাপন তাঁকে পীড়া দিতো। মেম্বারের অবস্থান থেকে মানুষকে দেবার মতো খুব বেশি কিছু নেই। বিষয়টি নিয়ে ভাতিজা ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলামের সাথে প্রায়ই বলাবলি করতেন। ইতোমধ্যেই মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার খাস জমিতে ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষদের পূনর্বাসনের উদ্যোগ তাকে আন্দোলিত করে। এখানে খাস জমি নাথাকায় তিনি ব্যথিত হন।
এমতাবস্থায় তৎকালীন ইউএনও জন কেনেডি জাম্বিল ছিন্নমূলদের পূনর্বাসনকল্পে জমিদাতা খোঁজছেন। এ উপলক্ষে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মতবিনিময় সভায় তিনি জমিদানে সম্মত হন।
মতি মেম্বারের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন-আমার বাড়িতে এখনো কয়েকজন ভূমিহীন আছেন। আমি এটার বাস্তবতা বুঝতাম। মিটিং শেষে আমি বাড়িতে ফিরে আমার স্ত্রী আমেনা বেগমের সাথে আলাপ করি। তিনি কোন প্রতিউত্তর না করেই তার নামের ২০ শতাংশ জমিটি লিখে দিতে সম্মত হলেন। এতে আমি অবাক। মহৎ উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্ত্রীর জমিটাই লিখে দেই। উপজেলা প্রশাসন ছিন্নমূলদের পূনর্বাসনটি আমেনা গুচ্ছগ্রামের নামকরণ করেন। এখানে ১০টি পরিবারকে পূনর্বাসন করা হয়েছে। ছিন্নমূলদের পূনর্বাসনে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা আত্মতৃপ্ত।
আমেনা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শাহানা বেগম (৩৫), রেজিয়া বেগম (৪৫), আলতাফুর রহমান (৫৫) জানান-বাস্তুহারা মানুষের জীবন যাপন কত যে কষ্টের; সেটা বুঝাতে পারব না। সারাদিন কাজ শেষে আপন ঠিকানায় আসতে পারছি। ঠিকানাহীন জীবনের অবসান কত আনন্দের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
সমাজসেবা অফিসার রুশিয়া আক্তার জানান-আমেনা গুচ্ছগ্রামের বসবাসরতদের আত্মনির্ভরশীল হতে গবাদিপশু-খাদ্য-বিভিন্ন ভাতা ও নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।