বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পাট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজশাহীর বাগমারায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে পাট বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পাট চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে উপজেলায় ২৪৬০ জন কৃষকের মাঝে পাট বীজ বিতরণ করে। সেই সাথে ওই সকল কৃষককে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৫ কেজি ইউরিয়া ও ৫ কেজি ডিএপি সার বিনামূল্যে প্রদান করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকরা প্রণোদনার বীজ পেলেও এখনো সার পাননি।
সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পাট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার বিতরণের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা তৈরি করে।
সেই তালিকা অনুযায়ী বীজ বিতরণ করা হয়। বর্তমানে ওই সকল কৃষকের মাঝে প্রণোদনার সার বিতরণের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। সে মোতাবেক গত রোববার বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের ২৫০ জন কৃষকের সার চেয়ারম্যান ও মেম্বারা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। উত্তোলনকৃত সার কৃষকদের মাঝে বন্টন না করে গোপনে মেম্বার আবদুর রহিম মদাখালী বাজারে ২জন কীটনাশক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রিয় করে দেয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাগমারা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার বিক্রয়কৃত ওই সকল সারের সন্ধান পান। পরে ঝিকরা ইউনিয়নের মদাখালী বাজারের দুই কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স স্বর্ণা ট্রেডার্স এবং মেসার্স মোস্তারী এ- নিরব ট্রেডার্সের দোকানে। সেখানেই পাওয়া যায় গোপনে বিক্রয় করা ২৫০ জন কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত ৫০ বস্তা সার। এর মধ্যে ২৫ বস্তা ইউরিয়া এবং ২৫ বস্তা ডিএপি। এ সময় মেসার্স স্বর্ণা ট্রেডার্স এর মালিক আমজাদ হোসেনকে দোকানে পাওয়া গেলেও মেসার্স মোস্তারী এ- নিরব ট্রেডাসের মালিক রুহুল আমিন পালিয়ে যায়। সরকারি সার বিক্রির দায়ে আমজাদ হোসেনকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানান ইউপি সদস্য আবদুর রহিম আমজাদ হোসেনের নিকট ১৫ বস্তা ইউরিয়া এবং ১৫ বস্তা ডিএপি সার বিক্রয় করে। সেই সাথে অবশিষ্ট ২০ বস্তা রুহুল আমিনের কাছে বিক্রি করে। প্রতি বস্তা ইউরিয়ার বিক্রয় করে ৭০০ টাকা এবং ডিএপি ৭৪০ টাকা। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রকাশ। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজশাহী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক কুমার বিশ্বাস, বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ, তদন্ত (ওসি) তৌহিদুর রহমান। প্রণোদনার সরকারি সার বিক্রি করায় দুই দোকান সীলগালা করে দেয়া হয়েছে।
পাট চাষীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ছুটে আসে। তারা পুলিশের নিকট অভিযোগ করে বীজ দিলেও কাউকে সার দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান-মেম্বার মিলে সার বিক্রি করে দিয়েছে।এ ঘঠনায় এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক খোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আটককৃত সার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য আবদুর রহিম আমার নিকট নগদ টাকায় ৩০ বস্তা সার বিক্রয় করেছে। সেই সারের মধ্যে থেকে কেবল দুই বস্তা বিক্রয় করেছি।
মেম্বার আবদুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছে সার বিক্রি করি নি। আমি বাহিরে আছি এখন কথা বলতে পারবো না।
ঝিকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মেম্বারদের মাধ্যমে মদাখালী বাজারে সার রাখা হয়েছে সেখান থেকেই কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। কোন সার বিক্রয় করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
এদিকে উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ইমতিয়াজ দেওয়ান বলেন, ইতোপূর্বে তালিকা অনযায়ী ২৫০ জন কৃষকদের মাঝে পাট বীজ বিতরণ করেছি। ওই সকল কৃষকদের মাঝে রাসায়নিক সার বিতরণের জন্য সার সরবরাহ করেছি। কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ না করেই কেন খোলা বাজারে বিক্রি হলো সেটা আমাদের জানা নেই। সরকারি সার বিক্রি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
এ ঘটনায় বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, প্রণোদনার সরকারি সার উদ্ধার করা হয়েছে। যে দোকানে রাখা ছিল তা সীলগালা করা হয়েছে। সার বিক্রয় করার দায়ে এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।