গৃহকর্মী ও কারখানার নারী শ্রমিকরা নানা ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার। তাদের দারিদ্রতার কারণে তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। তাছাড়া বিচার প্রার্থনার যায়গাও তাদের চেনা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। রাজধানীর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করা নারী কর্মীদের ৩০ শতাংশ আর কারখানায় কাজ করা নারী কর্মীদের ২০ শতাংশ যৌন হয়রানীর শিকার হন। অথচ বিচার পান না। আবার কাউকে বলতেও পারেন না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এ- ডেভোলাপমেন্ট (টিআইজিডি)-এর এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ জরিপ ও গবেষনা হয়। এতে অংশ নেন ২৫০ নারী কর্মী। তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ গৃহকর্মী জানান, তারা অন্য কর্মীদের নির্যাতনের কথা শুনেছেন বা দেখেছেন এমন অভিজ্ঞতা আছে ৪০ শতাংশ কারখানা কর্মীর।
গৃহকর্মী ও কারখানা শ্রমিক নারীরা যৌন হয়রানির কথা বলেছেন। এরমধ্যে আছে যৌন ইঙ্গিত দিয়ে করা কটাক্ষ ; উক্তি ; মন্তব্য এবং সরাসরি যৌন অবমাননা। তাকিয়ে থাকা, কটাক্ষ করা বা খারাপ অঙ্গভঙ্গি করার ঘটনা গৃহকর্মীদের সাথে বেশি হয়। অধিকাংশ গৃহকর্মী অন্তত: একবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে গবেষনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীরও নানা ধরন আছে। অনেকক্ষেত্রে যৌন হয়রানী প্রশংসা, সাহয্য করা বা সহানুভূতির স্থলেও হয়ে থাকে। গৃহকর্মীরা মূলত তাদের নিয়োগকারী পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ¦ারা হয়রানির শিকার হন। আর কারখানায় কাজ করা নারীরা নিয়োগকারী কর্মকর্তা এসবে না জড়ালেও তাদের সহকর্মীরা সুযোগ হাত ছাড়া করতে চান না।
গবেষনা প্রতিবেদন বলছে, বাসা বাড়িতে কাজ করা গৃহকর্মীরা একা একা বাসায় কাজ করেন বলে তারা নিজেদের অসহায় ভাবেন। আর কারখানায় কাজ করা নারী শ্রমিকরা সহকর্মীদের সাথে কাজ করেন তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবে। তাছাড়া কারখানায় নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র পৃথক হবার কারণে তারা নিজেদের সুরক্ষিত ভাবে। কোনো ঘটনা ঘটে গেলে মান সম্মান ও লজ্জার ভয়ে নিগ্রহের কথা তারা কাউকে বলতে চান না। ঘটনা কিভাবে কাকে বলবেন কি ফলাফল হবে এমন নানা চিন্তায় তারা আচ্ছন্ন থাকেন। মালিক ব্যাপারটায় হস্থক্ষেপ করলেও সংশ্লিষ্ট নারী তার জবানবন্দি পাল্টে ফেলে। গৃহকর্মীদের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ করার ব্যবস্থা নেই। তবে কারখানা শ্রমিকদের জন্য কারখানা কতৃপক্ষ বা মানবসম্পদ বিভাগ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ জানান না বলে গবেষনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এসব কাজে নিযুক্তদের কোন কার্যকরি সংগঠন নেই, নেই ট্রেড ইউনিয়ন। প্রতিবাদ ; প্রতিরোধের ব্যবস্থাও তাই সিমিত।
কিন্তু এভাবে চলতে পারেনা। সমাজের একটি নির্দ্দিষ্ট শ্রেনী যৌন হয়রানীর শিকার হতে থাকবে। আর সংশ্লিষ্টরা বিনা বিচারে রেহাই পেয়ে যাবে, তা কি সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে ?