জলাবদ্ধতা আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামে এই সমস্যাটা দিনে দিনে বাড়ছে। এই সমস্যার সমাধান কোনো কালেই পায়নি এই দুই নগরীর বাসিন্দারা। যদি চট্টগ্রামের কথা বলতে হয় তাহলে বলা যায়, এই নগরের মানুষ এই জলাবদ্ধতাকে সঙ্গি করেই এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়র পাল্টায় তবে এই সমস্যার শেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর যদি এই এক সমস্যা নিয়ে নগরবাসী জর্জরিত হয় তখন সত্যি আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকে না।
সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। এই বিষয় নিয়ে নতুন করে উলেস্নখ করার মতোও কিছু নেই। বাংলাদেশের এক জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে জলাবদ্ধতা। অথচ এটা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অবশ্য মাথাব্যথা না থাকারও কারণ আছে। এই জলাবদ্ধতার কষ্ট সহ্য করেই সাধারণ মানুষ দিন পার করে দিচ্ছে। সমস্যাগুলো সাধারণ মানুষের হচ্ছে এবং একটা মৌসুম পরে এই জলাবদ্ধতার বিষয়টা আবারও উধাও হয়ে যাবে। তাই এই বর্ষা মৌসুমে এটা নিয়ে কিছুদিন আলাপ হবে তারপর সব শেষ। প্রতিটি বছরই এই এক সমস্যা নিয়ে এই একই কথা, লাইভ, টকশো, সেমিনার, আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক, প্রতিবেদন, লেখালেখি সব হয়। শুধু হয় না সমস্যার সমাধান। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা হয় না তা নয়, অনেকেই বলে এসছে নানান পরিকল্পনার কথা। কিন্তু পরোক্ষণে কারো ভূমিকা দেখা যায়নি। এই সমস্যা সমাধানে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া উচিত তার কোনোটাই নেওয়া হয়নি এবং সেরকম কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। আশ্বাস আর ভরসায় জনগণের দিন চলে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্যিক রাজধানীতে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার এই মারাত্মক সমস্যা লেগে আছে এটা ভাবতেই অবাক হতে হয় আমাদের। বড় কথা হচ্ছে নগরীর ব্যস্ত স্পটগুলোতেই এই সমস্যা বেশি। নিউমার্কেট, কদমতলি, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বকশিরহাট, বহদ্দার হাট, ২নং গেট, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড়, শেখ মুজিব রোড়, চৌমুহনী রোড়, হালিশহর, টি. সি. রোড়, বড় পুল, ছোট পুল, অলংকার এসব স্থানে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রিকশা, সিএনজি, ভ্যানগাড়ি পুরো ডুবে যাওয়ার অবস্থা। বাস, ট্রাক ব্যতিত সব যানবাহন পানির নিচে আটকে গিয়ে যানজট তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে। কারণ পানির নিচে রাস্তাটাও যে অসম্ভব সুন্দর! যেমন ভাঙ্গা তেমনি কাদায় ভরপুর। এই জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক হয়ে উঠেছে নরকের চেয়ে খারাপ। প্রতি বছরই একই সমস্যার সম্মুখীন হয় চট্টগ্রামের সিংহভাগ জনগণ। কিন্তু এরপরেও এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ দেখা যায় না। এই অসহনীয় অসুবিধা দুর্গতি দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের পথ কোথায় তাও সংশ্লিষ্ট মহলের মাথায় আছে কিনা সন্দেহ।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এটি একটি বাণ্যিজ্যিক রাজধানী। এখানে প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। এই জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রামের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ছে। নিজ চোখে না দেখলে হয়তো বুঝা অসম্ভব। সিটির ভেতর যদি এমন অবস্থা হয়, তবে সিটির বাইরের মানুষ কত কষ্ট পাচ্ছে তা ভেবে দেখুন। সবাইতো মানুষ। সবার সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তবে প্রতি বছর কোনো এই এক সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে থাকবে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে হবে তারপর অন্যান্য উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। আগে রাস্তাঘাট সংস্কার হোক তারপর সবুজ নগরী তৈরি হবে। আমার প্রয়োজন আগে ভাত, আমাকে যদি আগে ডাল দেয় তবে তো হবে না। ভাত পেলে তারপর না হয় ডালের কথা চিন্তা করব। আর ডাল না পেলেও অন্তত লবণ দিয়ে ভাত খেয়ে হলেও আমি তৃপ্তি পাব। ঠিক তেমনি রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, এসব সমস্যার সমাধান হলে চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতেই তৃপ্তি পাবে। আগে চোখের সামনে যে সমস্যা আছে সেটা নিয়ে ভাবেতে হবে, তারপর অন্যটা। তাই জলাবদ্ধতার সমস্যা বর্তমানে বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সব প্রশাসনের ভূমিকা থাকতে হবে অধিক। এই সমস্যা সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে সরকারকেও। ঢাকার মতো চট্টগ্রামকেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই চট্টগ্রামবাসী সুখী হবে। সর্বশেষে বলতে চাই, সরকার, প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের জনগণেরও এই সমস্যা সমাধানে বিরাট ভূমিকা রাখা সম্ভব। জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে আমাদেরও বড় এটা ভূমিকা রয়েছে। আমরাই ড্রেন, খালসহ বিভিন্ন স্থান ময়লায় ভরপুর করে রাখি। যার কারণে আমরা নিজেরাই এই জলাবদ্ধতার জালে আটকে যাই। তাই এই সমস্যার সমাধানে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখি। তাহলে দেখা যাবে, জলাবদ্ধতার সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
আজহার মাহমুদ: কলাম লেখক