বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক, বিপিএম বলেছেন, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বমানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছে। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিকতার কারণে তারা বিশ্বের সবার কাছে আজ উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৯ মে) সকালে রাজশাহী কলেজ অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কতৃক আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শান্তিরক্ষীদের গৌরবময় অংশগ্রহণকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছরের ২৯ মে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত হয়। এবারের শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘চবড়ঢ়ষব, ঢ়বধপব ধহফ ঢ়ৎড়মৎবংং, ঃযব ঢ়ড়বিৎ ড়ভ ঢ়ধৎঃহবৎংযরঢ়’ অর্থাৎ ‘জনগণ, শান্তি ও অগ্রগতি; অংশীদারিত্বের শক্তি।’
অনুষ্ঠানে আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আমাদের জন্য একটি পবিত্র দায়িত্ব। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ আজ গর্বিত অংশীদার। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- আমাদের পররাষ্ট্রনীতির এই দৃঢ় অঙ্গীকারকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী একযোগে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের নানা প্রান্তে বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। অতীতেও বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ কারণে জাতিসংঘের ১৯৪ টি সদস্য দেশের মধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ খ্যাতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে শান্তিরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য আমাদের শান্তি মিশনের যাত্রা শুরু করেছিল। আর এখন পর্যন্ত ৪০ দেশের ৫৬টি মিশনে প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার যোদ্ধা যোগদান করেছে। এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, অনুপ্রেরণা, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনায় বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। মানবতায়, দক্ষতায় আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
অনুষ্ঠানে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬১ জন শহিদকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধনে আবদ্ধ সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, যুদ্ধ ও সংঘাতমুক্ত আগামীর পৃথিবী কামনা করেন।
আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অতিথির বক্তব্য দেন- রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, র্যাব-৫-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা, মেজর মোবাশির হাসান খান, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আসাদুল হক, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল খালেক, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. হবিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কামাল প্রমুখ।
এর আগে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি মহানগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে রাজশাহী কলেজে গিয়ে শেষ হয়।