সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বাড়ার ফলে মাদকাসক্ত বাড়ছে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি পরপরই মাদকে জড়াচ্ছেন নবীন শিক্ষার্থীরাও।
এ ক্ষেত্রে প্রসাশনের নিরব ভূমিকাকে দায়ী করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকমহল। অভিযোগ রয়েছে, গণরুমে উঠিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক ধরিয়ে দেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত।
কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মাত্রারিক্ত নেশা করে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে আশিক কোরাইশি নামের এক শিক্ষার্থী। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার জোকার্না গ্রামের মৃত সৈয়দ কায়েদুল হকের ছেলে। আশিক কোরাইশির মায়ের বরাবর ২৯মে-২০২২ইং চিঠি এবং ওই শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে প্রশাসন।
চিঠিতে মাদক সেবনের কারণে আশিক কোরাইশিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলেও উল্লেখ করেন।।
অভিযুক্ত আশিক ইবির মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৯ মে) আশিকের মা তাহমিন চৌধুরীর বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৫ মে আশিক কোরেশির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনার সন্তানকে মাদক সেবন থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আশিক কোরেশির বৈধ অভিভাবকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এ ছাড়া আশিককে আমরা একটি কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছি। ক্যাম্পাসে মাদকের আকার দিন দিন ভয়ংকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পরবর্তীতে অভিযোগ পেলে আমরা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নেব।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে জ্ঞান হারান আশিক কোরেশি। এক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফেরায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে যায় সঙ্গীরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাকে কুষ্টিয়ায় পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী স্থানীয়রা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় কিছু কর্মচারী ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহ করে থাকে। বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ীরা ভ্যানচালক, ঘাসকাটা শ্রমিক, দর্শনার্থীসহ বিভিন্ন ছদ্মবেশে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, লালন শাহ হল পকেট গেট, বঙ্গবন্ধু হল পকেটগেট, লেকসহ বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
গেটের পাশ্ববর্তী চায়ের দোকানগুলোতে এজেন্টরা ছদ্মবেশে অবস্থান করে,পরিচিত শিক্ষার্থীর মোবাইলে যোগাযোগের, মাধ্যমে ক্যাম্পাসের বিতরে মাদক সরবরাহ করে। মাঝেমধ্যে এজেন্টরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদকের আসরে বসেন।শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীও মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। গত চার বছরে মাদকসহ অন্তত ৩ জন কর্মচারী আটক হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় আনোয়ার জোয়াদ্দার নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে ইবি থানা পুলিশ। এসব ইয়াবা তিনি ক্যাম্পাসে সরবরাহের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন বলে সূত্রে জানাযায়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে মাদকের আসর বসলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ইবি কর্তৃপক্ষ। রাত হলের কক্ষে, ছাদে, বঙ্গবন্ধু হল পুকুড় পাড়, ক্রিকেট মাঠ, স্মৃতিসৌধ, টিএসসিসি, মফিজ লেকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসে মাদকের আসর। ছাত্রহলগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হল ও সাদ্দাম হোসেন হলে মাদকের আসর বেশি বসে। নবীন শিক্ষার্থীরাও মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের এ ভয়াবহ নেশা ধরিয়ে দেন। মাদকাসক্তির কারণে পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় একাধিকবার ফেল করে বিভাগ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ, জুনিয়রদের র্যাগিং, শাসানো, হলের ডায়নিং বা দোকানগুলোতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফাও খাওয়া, মারামারি, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষাথীরা।