গাজীপুরের টঙ্গীর ব্যস্ততম চেরাগআলী-ভাদাম সড়কে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলক-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো ক্লাসে এবং বিভিন্ন ওষুধ ও পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। সড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজট লেগে থাকায় পায়ে হেঁটে যাওয়ারও কোন সুযোগ থাকে না। ফলে বিভিন্ন অফিস-আদালত ও কালকারখানাগামী শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মঘন্টা খোয়াচ্ছেন। যানজটের কারণে জরুরী সেবাদানকারী বিদ্যুৎ, গ্যাস, এ্যাম্বলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ কোন যানবাহনই সময়মতো নির্দিষ্টস্থানে পৌঁছতে পারছে না। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সকালে সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, শিল্পনগরী হওয়ায় চেরাগআলী-ভাদাম সড়কটি এলাকার একটি ব্যস্ততম সড়ক। এসড়ক দিয়ে ভাদাম, বাকরাল, মুদাফা, গুটিয়া, গুশুলিয়া, সাতাইশ এলাকার প্রায় ৩-৪ লাখ লোকের যাতায়াত। চেরাগআলীতে অবৈধ অটোরিকশাস্ট্যান্ড, মাইনুদ্দিন মার্কেটে এটিবি কটন লাইন কারখানার ঝুট বহনকারী বড় বড় কার্গো কভার্ডভ্যান-ট্রাক, আসিফ-সবুজ ট্রাক সার্ভিসের আন্ত:জেলা ট্রাক, ন্যাশনাল পলিমার কোম্পানীর ট্রাকসহ বিভিন্ন কোম্পানীর ট্রাক-কভার্ডভ্যান ও বালি-পাথর বহনকারী ড্রাম ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কখনো কখনো রাতের আঁধারে অধিকাংশ রাস্তাজুড়ে ইট-পাথর-বালি রেখে যায় ব্যবসায়ীরা। এগুলো রাস্তা থেকে সরাতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে যায়। এতে এই সড়কে সকাল থেকে রাত ১০ পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। ফলে বেশুমার কষ্টে পড়েন ওই সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারণ। দীর্ঘ যানজট লেগে থাকায় পাইলট স্কুল এ- গালর্স কলেজ, হাজী কছিমউদ্দিন পাবলিক স্কুল, নিউব্লোন স্কুল, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এ- কলেজ, কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয়, টঙ্গী কমার্স কলেজ, হায়দার পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সময়মতো ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এছাড়াও যানজটে আটকা পড়ে হামীম গ্রুপ, এলিয়েন ওয়েভিং, সিসিএল, তামিশনা, মাসকো, ডিএএল, জুভিনাইল, গোরিয়ং ফ্যাশন, তুসুকা ফ্যাশন, আল্ট্রাওয়াশিং, ষ্টিডফাস্ট ওয়াশিং, টিজে ফ্যাশনসহ ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, নোর্ভাটিজ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কারখানায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তাদের কর্মঘন্টা খোয়াচ্ছেন।
এলাকাবাসী চিকিৎসক আবদুল মতিন বলেন, ইতঃপূর্বে এই সড়কে এত যানজট ছিল না। কিন্তু সড়কে যত্রতত্র ট্রাক-কভার্ডভ্যান, কার্গো দাঁড় করিয়ে রাখা এবং অপরিকল্পিতভাবে সড়কে পাথর, বালি, ইট ফেলে রাখায় সকাল থেকে যানজট শুরু হয়। এতে মানুষজন তাদের কর্মস্থলে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
হাজী কছিমউদ্দিন পাবলিক স্কুলের অভিভাবক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, সড়কের পাশে অবৈধভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখায় সারাদিনই যানজট লেগে থাকে। ফলে সন্তানদের নিয়ে সময়মতো স্কুলে পৌঁছা সম্ভব হয় না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
হামীম গ্রুপের সিসিএল কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী শ্রমিক জানান, সড়কে ট্রাক-কভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। রিকশাতো দুরের কথা পায়ে হেঁটেও এসড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না। তাই প্রায়ই আমাদের অফিসে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। আর তিনদিন দেরি হলে একদিনের বেতন কাটা যায়।
যোগাযোগ করা হলে এটিবি কটন লাইন কারখানার পরিচালক আজিজ মির্জা বলেন, আমার কারখানার কোনো গাড়ি রাস্তায় থাকে না। মালামাল লোড-আনলোড হওয়ার সাথে সাথেই চলে যায়। তবে ন্যাশনাল পলিমার কোম্পানীসহ অন্যান্য কোম্পানীর অনেক গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, সড়কের পাশে অবৈধভাবে কেউ ট্রাক-কভার্ডভ্যান দাঁড় করিয়ে রেখে জনসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।