ময়মনসিংহের ভালুকায় কোকাকোলা ভেবারেজ কোম্পানীতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং গত পাঁচদিন ধরে শ্রমিকরা মিলগেইটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এরই জের হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে আবুল কালাম আজাদ ও রুহুল আমিন নামে দুই সিবিএ নেতাকে বিভিন্ন স্থানে রেখে বহিরাগতরা ব্যাপক মারপিট করে। পরে সন্ধ্যায় হবিরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। ৯৯৯ নম্বরে সংবাদ পেয়ে রাতে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
শ্রমিকরা জানান, তারা ১০৮ জন উৎপাদন সেকশনে কাজ করে আসছেন। ১৮ ভাগ বেতন বৃদ্ধির দাবি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, উৎসব বোনাস, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ; পরিবহন সুবিধা এবং ওয়েল ফেয়ার সুবিধাসহ ১৪ দফা দাবি নিয়ে তার দীর্ঘদিন ধরে সুপারিশ করে আসছিলেন। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোন তোয়াক্কা করেননি। এরই জের হিসেবে গত ৪ জুন থেকে তারা মিলগেইটে মানববন্ধন করে আসছেন। তাছাড়া তাদের শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ ও রুহুল আমিনের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও নির্যাতণের প্রতিবাদে তাদের মানববন্ধন কর্মসচি অব্যাহত আছে, বুধবারও তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্যাতণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন চলবে।
নির্যাতণের শিকার সিবিএ নেতা আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার বিকেলে মানববন্ধন শেষে তিনি ও রুহুল আমীন ইমাম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাসে গাজীপুর বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে এসএমসি কোম্পানীর সামনে পৌছামাত্র ফিল্মীস্টাইলে মোটরসাইকেল বহর এসে বাসটি থামিয়ে তাদের বাস থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে দু’জনকে মারধর করে। এ সময় রুহুল আমীন কৌশলে চলে যেতে পারলেও আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে এবং সন্ধ্যার পর হবিরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আহত অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। পরে অপর শ্রমিক নেতা রুহুল আমীন ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে খবর পেয়ে পুলিশ রাত ৮ টার সময় তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রুহুল আমীর জানান, কোম্পানীর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে নির্যাতণের শিকার আবুল কালাম আজাদ বাদি হয়ে অজ্ঞাত ১৫/২০ জন সন্ত্রাসীকে আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ফ্যাক্টীরীর ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান খোকন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে আমাদের দুই নেতা আবুল কালাম আজাদ ও রুহুল আমিনকে বাড়ি যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে ও আবুল কালাম আজাদকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন কার হয়। বুধবার বিকেলে পূর্ব কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং আমাদের নেতাদের নির্যাতণের প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে হুমকীর মুখে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছি। আমরা এখন সন্ত্রাসীদের ভয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
কোম্পানীর মানবসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, বিষয়টি কোম্পানীর গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক আনোয়রুল আমীন দেখেন। তার সাথে কতা বলতে পারেন। কিন্তু ওই পরিচালককে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
ভালুকা মডেল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, শ্রমিক নির্যাতন ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত চলছে।
ময়মনসিংহ শিল্পপুলিশ ৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজি সায়েদুর রহমান জানান, শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে মিলগেইটে প্লেকার্ড হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পালন করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে সমাধানের জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সাথে শিল্পপুলিশের আলোচনা চলছে।