ফরিদগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরপর দুইদফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত শনিবার সকালে মাদ্রাসার সামনে দ্বিতীয়দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার দলীয় এই হামলার ঘটনা সাথে জড়িতে। এই ঘটনায় আহত শিক্ষক হযরত আলী ও ফারুক হোসেন বাবু চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ও শিক্ষক আ. হাই সালাম ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে একই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে গত ৮ জুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সামনে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ছামাদিয়া ওদুদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভা আহবান করা হয়। সভার আগে পার্শ্ববর্তী কবর জিয়ারতে অংশ নেন নবনির্বাচিত সভাসিত কামরুল ইসলাম এডভোকেট, সহসুপার আবুল কালাম, সদস্যবৃন্দসহ লোকজন।
সহসুপার আবুল কালাম দাবী করেন, তারা মোনাজাতের জন্য হাত তুলেছিলেন। ওই সময় অজ্ঞাত পরিচয় একদল সন্ত্রাসী তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে, শিক্ষক আঃ হাই সালাম মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
হামলায় আহত ফারুক হোসেন বাবুর বন্ধু পারভেজ (২০) মুঠোফোনে জানান, আমি ও বাবু স্থানীয় বালিথুবা বাজারে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে সালাম মাস্টারের নেতৃত্বে একদল লোক আমাদের ওপর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ওই সময়ে, বাবুর হাতে চারটি কোপ মারা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন পথচারীও হামলার শিকার হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ জুন সভাপতি নির্বাচনের তারিখ ধার্য করেন ও সভা ডাকেন নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আবদুল্লাহ আল মামুন। সভার স্থান ছিলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। সেখানে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও পূর্ববর্তী এডহক কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন ভুইয়া, মাদরাসার শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী উপস্থিত হন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দ্বিতীয় তলায় সভা শুরুর পূর্বে সরকার দলীয় পরিচয়ধারী প্রায় শতাধিক কর্মী সমর্থক সভাস্থলে অবস্থান নেয়। সভাস্থলে ঢোকার পথে শিক্ষা অফিসের সম্মুখ থেকে পূর্ববর্তী এডহক কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন ভুইয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কথা বলতে চাইলে মারধরের শিকার হন ওই মাদরাসার শিক্ষক হযরত আলী, সাকিবুল ইসলাম, পূর্বের সভাপতির গাড়ির চালক রফিকসহ কয়েকজন দর্শনার্থী। ওই সময়ে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় বলে সংশ্লিষ্টরা দাবী করেছেন। তারা বলেছেন, সব কিছুই ঘটেছে উপজেলা পরিষদের স্থাপিত সিসি ক্যামেরার সামনে। একপর্যায়ে তারা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে আহতদের নিরাপদে যেতে সাহায্য করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আহত শিক্ষক হযরত আলী বলেন, আমাদের ওপর হামলার বিচার চাই।
এদিকে, কেনো ওই হামলা ও সংঘর্ষ- এমন প্রশ্নে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পছন্দের লোককে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য সরকার দলীয় একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা, ভীতির সৃষ্টি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা বলেন, পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাদ্রাসায় সভা না করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে সভার আযোজন করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জড়িত। তাদের ইচ্ছানুসারে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আবদুল্লাহ আল মামুন এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে ফোনের স্লইচ বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলী রেজা আশরাফীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, মাদ্রাসা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেছেন, একটি সংঘর্ষের ঘটনা শুনেছি। তবে, কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।