যেখানে ১৮ লক্ষ অনাথ-সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরকে মাত্র ১ কোটি টাকা ব্যয় করলেই শিক্ষা-আবাসন-কর্মসংস্থান করতে পারা যায়, তা না করে ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ওই প্রকল্পের আওতায় সাঁতার শিখতে ২টি দলে বিদেশ যাওয়ার প্রহর গুণছেন ১৬ কর্মকর্তা। আর তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। দেশে প্রশিক্ষণ নেবেন ৯৮০ কর্মকর্তা। তাদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এসে বাংলাদেশে ১৮ লাখেরও বেশি শিশু-কিশোর রাস্তায় দিন যাপন করে, ১ বেলা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা বঞ্চিত-খাদ্য বঞ্চিত-আবাসন বঞ্চিত-বস্ত্র বঞ্চিত এই বিশাল অঙ্কের শিশু-কিশোরদের জন্য সরকার কোন ব্যবস্থা না করলেও মাত্র ৫ লক্ষ শিশু-কিশোরকে সাঁতার শেখাতে ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যা ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্প ও এর ব্যয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
আমাদের সাধারণ মানুষের রক্ত পানি করা টাকা খরচ করে রান্না শিখতে বিদেশ- বালিশ আনতে বিদেশ- সাঁতার শিখতে বিদেশ, কেনাকাটা করতে বিদেশ, পরিচ্ছন্নতা শিখতে বিদেশ, খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ, লুঙ্গি পড়ার কৌশল শিখতে বিদেশসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে পারেই নি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার; বরং এবার নতুন করে কয়েকশ কোটি টাকা লোপাট করে দিতে মাঠে নেমেছে সাঁতার শেখানোর প্রকল্প নিয়ে। অথচ এই সাঁতার শেখানোর জন্য কেবল অভিভাবকদেরকে নির্দেশনা দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যেতে পারে। তা না করে লক্ষ লক্ষ অনাথ-এতিম শিশুদের শিক্ষা-খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা না করে এমন একটা বড় অংকের টাকা খরচ করে সাঁতার শেখানোর মত তামাশা জনগণ আর দেখতে চায় না। দয়া করে জনগণকে মুক্তি দিয়ে অন্তত নীতির রাস্তায় অগ্রসর হোন। সম্ভব হলে ধর্ম-মানবতা-সুশিক্ষা-সমাজ-সভ্যতায় আলোকিত হোন। তা না হলে আমজনতা কখনোই ক্ষমা করবে না; ক্ষমা করবে না বাংলাদেশ।
আমি যেহেতু লেখালেখি করি-রাজপথে থাকি। এই সময়ে এসে সাঁতারের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টা দেখে একজন নতুনধারার রাজনীতিক খুবই হাতাশা আর বেদনার সাথে আমাকে বললেন, দ্রব্যমূল্য চরম উর্ধগতি বিপাকে সাধারণ মানুষ অথচ ওনাদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে সাঁতার শিখতে যাওয়া কতটা যুক্তি? এই টাকা কার? এমন দেশে জন্ম নিয়ে আমি লজ্জিত, ধিক্কার জানাই এই দেশের শাসন ব্যবস্থাকে। ধিক্কার জানাই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে।’ তার মত করে আমিও ধিক্কার জানাই, একই সাথে বলতে চাই- সাঁতার শিখতে বিদেশ যাক তাতে সমস্যা নাই। সাঁতার শেখার পরে যেন তাদেরকে সাঁতার কাটিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, এতিম শিশু-কিশোরদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি, বেকার বৃদ্ধি সমস্যা প্রকট আকার সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত দেশের নিন্ম ও মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষকে কষ্টে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সাতার শেখার নামে দেশের জনগনের লাখ লাখ টাকা বিদেশে যাচ্ছে চলে, সাঁতার শেখার কাজটা কি খুবই জরুরী? প্রশ্নের পর প্রশ্ন নির্মাণ এ কারণে হচ্ছে যে, জাতির এই ক্রান্তিকালে লোভ মোহহীন নিরন্তর রাজপথে থাকি আমি, কাজপথে থাকি আমি। যখন নিরন্ন মানুষের জন্য নিবেদিত থাকতে থাকতে শুনতে পাই, পত্রিকায় দেখতে পাই যে, শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, সুরক্ষা ও সাঁতার সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যেখানে সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। টাকার এমাউন্টটা এই করোনা পরিস্থিতিতে খরচ করা মানে নিরন্ন মানুষের পেটে লাথি মারা। বড় অংকের একটি এমাউন্ট লুট করা। এই লুট করার চেষ্টাকে কেন মেনে নেবে বাংলাদেশের মানুষ?
অন্তত আমি মানতে পারি না। আর তাই লিখতে থাকি কালোর বিরুদ্ধে; আলোর যুদ্ধে থাকা আমি মন থেকে চাই, দেশে-সমাজে-জীবনে নেমে আসুক মৌলিক সুবিধাগুলো। যে দেশে শিশু-কিশোরেরা পুকুরে-খালে-বিলে-নদীতে সাঁতার শেখে এখনো বাবা বা অন্য কোন স্বজনের হাত ধরে; সেই দেশে সরকারের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার লক্ষ্যে বলছে- শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশের ১৬টি জেলার ৪৫ টি উপজেলায় ৮ হাজারটি শিশু যতœ কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এই টাকা কেন কি কারণে কিভাবে বাংলাদেশে সচিবালয়ে কর্মরত আমলারা ভাগ-বাটোয়ারা করবে তা আমি জানি না; তবে এতটুকু জানি সংবাদযোদ্ধা রোজিনা ইসলাম বা অন্য কোন সংবাদযোদ্ধা এ বিষয়ে লিখেবেন না, ধরবেন না কলম। যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে থাকা সংবাদযোদ্ধারা কলম ধরেন, তাহলে আসতে পারে চরমরকম মানহানিকর পরিস্থিতি। যেভাবে সচিবালয়ে আমাদের রোজিনা আপার সাথে হয়েছিলো চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিলো; তার পূনরাবৃত্তি তারা কেউ চান না বলেই লিখছেন না, বলছেন না আমাদের রাজনীতিকদের চাটুকার অংশটি। এরা কেবল উন্নয়ন দেখে, কিন্তু পতন দেখে না। এরা কেবল পদ্মাসেতু দেখে; কিন্তু পদ্মাসেতুর অন্তরালে বুলেট ট্রেন প্রকল্প পরীক্ষার নামে শত শত কোটি টাকা, সাঁতার প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা দেখে না। এই ঘটনাগুলো দেখতে হবে স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি যদি তা না দেখেন, তাহলে পথ হারাবে বাংলাদেশ; যা আমাদের কাম্য নয়; কাম্য কেবল লোভ মোহহীন নিরন্তর এগিয়ে চলা বাংলাদেশ-এগিয়ে চলা বাংলাদেশের মানুষ...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি।