নিহতদের দাফন বাবদ ২০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক সহায়তা ঘোষণা করেছিলেন বিভাগীয় কমিশনার। সেই টাকা ব্যয় করেই নিহতদের দাফন হওয়ার কথা ছিল। অথচ ঘটনার ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও নিহতদের পরিবার অদ্যবর্ধি এক টাকাও সহায়তা পাননি।
উল্টো কোন কোন পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ধারদেনা করে মরদেহ বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। এরআগে গত ২৯ মে সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার সানুহার নামক এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ১০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও এখনও বাসের চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা নিহতদের মরদেহ দাফনের কোনো টাকা বরাদ্দ পাননি। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পুনরায় আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই সহায়তা প্রদানের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা নাসির হাওলাদার বলেন, দুর্ঘটনায় আমার ভাই রমজান মারা গেছে। সে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকরি করতো। বোনের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে এসে রমজান মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। তার পরিবার এখন অসহায় জীবন যাপন করছে। নাসির আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ একটি টাকাও সহায়তা করেনি। এমনকি উপজেলা প্রশাসন থেকেও কেউ খোঁজ নেয়নি। রমজানের দাফনের টাকাটাও আমাদের ধার করে পরিশোধ করতে হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের মীরের হাওলা গ্রামের আল আমিন বলেন, দুর্ঘটনায় আমার পরিবারের দুইজন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদের বাসিন্দা হালিম মিয়া আমার ভাগ্নে। এ সময় হালিমের ফুফাতো ভাই রেজা চোকদারও নিহত হয়। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই অসচ্ছল। বরিশালে যখন মরদেহ আনতে যাই, তখন বলা হয়েছিল অর্থসহায়তা করবে। কিন্তু আমরা এতোদিনে সেই টাকাও পাইনি।
ঝালকাঠির বাসিন্দা আঁখি বেগম বলেন, আমার ছেলে আরাফাত (৯) মারা গেছে। আমার ও ছোট মেয়ে মরিয়মের পা ভেঙেছে। আমরা একটি টাকাও সাহায্য পাইনি। ধারদেনা করে আমাদের চিকিৎসা চলছে। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে দুনিয়ায় নেই। পুরো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছি। সেই বাসচালক আজও যখন গ্রেফতার হয়নি আর হবে বলেও মনে হয়না। সবাই শুধু নিয়ম রক্ষা করে চলে, আমাদের পাশে কেউই থাকেনা।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবেকুন নাহার বলেন, আমার উপজেলার একজন শিশু নিহত হয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনে কোনো বরাদ্দ আসেনি। মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উর্মি ভৌমিক বলেন, ওই দুর্ঘটনায় উপজেলার ভেচকী এলাকার দুইজন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যখন গিয়েছি, তখন তাদের দাফন হয়ে গেছে। নিহতদের পরিবারের অবস্থা সচ্ছল। সহায়তার জন্য স্বজনদের বললে তারা বলেছিলেন, দরকার নেই। তবে নিহতদের দাফনের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ আসেনি। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুহৃদ সালেহীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনুকূলে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওছার হোসেন বলেন, দাফনে সহায়তার জন্য কোনো বরাদ্দ এখনো আমরা পাইনি। পেলে নিহতের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসানের বলেন, ঘটনার পরপরই নিহতদের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। হয়তো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের ফান্ডে টাকা ছিলোনা বিধায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো হাতে পায়নি। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত এ সহায়তার টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা লাইন পরিবহনের চালকের ভুলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার সানুহার নামকস্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন গুরুত্বর হয়েছেন। ঘটনার পরপরই আহতের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যান বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান। তখন তিনি নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দেয়ার ঘোষণা করেছিলেন।