সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারো বন্যার ছোবলে ডুবে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সিলেট শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় ও বিমান বন্দর বন্ধ করা ঘোষণা করা হয়েছে বন্যার পানির তোড়ে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুতের সরবরাহ কেন্দ্র ও বিদ্যুতের পিলার ডুবে যাবার কারণে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ও ইন্টারনেট সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের মেঘালয় ও আসামে অতিভারী বৃষ্টির কারণে ঢল নেমে বাংলাদেশে আসছে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের ১৭টি জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হবে না। সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশা নেই। দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি দুই দিনের মধ্যে আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। মেঘালয়ে বৃষ্টির পানি এসে সিলেট বিভাগে হটাৎ বন্যা সৃষ্টি করেছে। এ বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। পরিস্থিতি সবচে খারাপ সুনামগঞ্জে। জেলার ৯০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। অন্য দিকে আসামের বৃষ্টির পানির ঢল আকারে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। এতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলদামারি ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। শেরপুরের মিনাইগাতী উপজেলার ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। লালমনির হাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় তিস্তা নদীর কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধা ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলায় নদী বেষ্টিত ১৬৫ টি চর প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় তলিয়ে গেছে অনেক ফসলের খেত ও মাছের ঘের।
চারদিকে এ বন্যার ছোবলে মানুষ আশ্রয় হারিয়েছে। তাদের বসত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানির কারণে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ যেতে পারছে না। সিলেট সুনামগঞ্জে হাসপাতালেও পানি উঠে গেছে। রান্না করার অভাবে মানুষ না খেয়ে দিন পার করছে। বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য করতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। ১৯ জুন থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অ-স্থগিত করা হয়েছে।
মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, তাদের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে পানি নামা শুরু হলে নানা রোগব্যধি দেখা দিলে তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেবার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। এজন্য স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর অধিদপ্তর ও এনজিও গুলোকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করবো প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাই এগিয়ে আসবেন।