ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে প্রায় ৪ ফুট পানি বেড়েছে। এতে করে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোনা আমন ফসলি জমি, ৫ হাজার হেক্টর পাট খেত ও মৌসুমী শাক-সবজির জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া শনিবার রাতে পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের একটি ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চানপাড়ার সাথে উপজেলা সদরসহ বুড়িশ্বর ইউনিয়নের যোগাযোগ সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নাসিরনগর উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভলাকুট ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, চাতলপাড় ইউনিয়নে ৭৫ হেক্টর, কুন্ডা ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, ধরমন্ডল ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর ও ফান্দাউক ইউনিয়নে এক হাজার ৪১৫ হেক্টর বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। বন্যার পানিতে ওই সকল এলাকার ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান পানির নিচে সম্পূর্ন তলিয়ে গেছে ও আংশিক তলিয়ে গেছে আরো ২ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু কৃষকদের দাবি উপজেলার অধিকাংশ জমিই পানির নিচে।
এলাকাবাসী টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নেই বোনা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিন আগেও ওই সকল ফসলি জমিতে পানি ছিল না। বর্তমানে ধানি জমি গুলি ৩/৪ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে উপজেলা সদর, ভলাকুট ও ফান্দাউক ইউনিয়নের তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ঢুকে পড়ায় ওই সকল এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ধরমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান আছে। যার সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ সরজমিনে এসব জমি পরিদর্শন করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সাঈদ তারেক বলেন, উজানের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাসিরনগরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধানি জমির ধান পানির নীচে সম্পূর্ন এবং ২ হাজার হেক্টর ধানি জমি আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া পাট ও শাকসবজির জমি তলিয়ে গেছে ১ হাজার হেক্টর জমি। তিনি বলেন, দ্রুত পানি কমে গেলে ধানের কোন ক্ষতি হবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোনাব্বার হোসেন বলেন, নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার হরিপুরে একটি ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। আমরা বন্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি কোন মানুষই আমাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না। তিনি বলেন, ধানি জমি থেকে দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।