অসহায় রোগিরা চিকিৎসকের কাছে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে ঘিরে ধরেন ৭/৮জন লোক। চিৎিসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার এই ঘটনায় প্রায়শই বিব্রত হন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা লোকজন। এইদৃশ্যটি বেসরকারি হাসপাতালে নিত্যদিনের ঘটনা হলেও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও বর্তমানে এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনের দৃশ্য এটি এখন স্বাভাবিক। খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তকর্তা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারচ্ছেনা তাদের উৎপাত।
চিকিৎসকের কক্ষের দরজায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করার নিষেধ থাকলেও কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কেউই তা মানছেন না। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। সরকারী হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম্য দেখে মনে হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে এবং ভিতরের বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঔষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই আছে। এমনকি দেখা গেছে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে মহিলা রোগীদের সাথে ঠাসাঠাসি করে রোগীদের বিব্রত করে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে তারা ভিজিট করে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বেঘাত ঘটাচ্ছেন। দেখা গেছে, যখন রোগী টিকেট কেটে চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসকের কক্ষে যান তখন একাধিক প্রতিনিধি ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ রোগীকে অপেক্ষায় রেখে তাদের ভিজিট সেরে নিচ্ছেন। এর বাহিরে প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান দৃশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখার জন্য প্রতিমাসেই কলম, পেড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি-ফ্রিজসহ মোটা অংকের উপহার দিয়ে দিতে হয় চিকিৎসকদের। তার বিনিময়ে রোগীকে দেয়া ব্যবস্থপত্রে আমাদের কোম্পানীর ওষুধ লিখেন তারা। এছাড়াও এসব ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি মেইল করে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতে হয়।
সেলিনা বেগম (৩০) ফুলবানু (৪৮) ইকবাল হোসেন (৪৫)সহ বেশ কয়েকজন রোগী বলেন, গত কয়েকদিন যাবত অসুস্থ্য, হাসপাতালে আসছেন, সরকারি চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে, বাহিরে স্যারেরা যে ভাবে ফটো তোলে মনে হয়, বাহির থেকে কিনা ছাড়া ঔষুধ দিবেনা। আমরা যদি বাহিরে দোকান থেকে ঔষুধ কিনা লাগে তাহলে সরকারি হাসপাতালে এসে কি লাভ?
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: আশরাফ আহামেদ চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঔষুধ কোম্পানীর লোকজন চিকিৎসকদের সাথে ভিজিট করা নিষেধ। ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের সপ্তাহে দু’দিন দুপুরের পর এসে ভিজিট করার একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সময় লঙ্ঘন করছে। আমি ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।