চিরিরবন্দরের আমেনা বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এ- কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রাণীর অভিযোগ উঠলে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ওই অধ্যক্ষকে অনিদ্রিষ্টকালের জন্য ছুটি দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে পুনর্বহালের দাবিতে বিেেক্ষাভ করে প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালালে কতৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি ৫ দিনের জন্য ছুটি ঘোষনা করেছে।
বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, প্রায় ২০/২২ দিন পূর্বে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির আবাসিক এক ছাত্রী তার পরিবারকে জানায়, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেছে। ওই ছাত্রীর পিতা বিষয়টি বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে জানালে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ গত ২ জুন ওই অধ্যক্ষকে ১৫ দিনের জন্য ছুটি প্রদান করে।
গত ১৮ জুন প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ ওই অধ্যক্ষের স্ত্রী শিক্ষিকা খালেদা বেগমকে চাকুরীচুত্য করতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ বিষয়টি জানতে পেরে তার মেয়ে ওই স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থীনির আহবানে আবাসিক বন্ধু ছাত্রীরা দুপুরে ক্লাস বর্জন করে অধ্যক্ষ ও শিক্ষিকা খালেদা বেগমকে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরবর্তিতে ছাত্ররাও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে দিনভর বিক্ষোভ চালায় এবং ক্যাম্পাসে ভাংচুর চালায়। শিক্ষার্থীরা আমেনা বাকী ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী জয়ন্ত রায় ও রোমানা নামে এক শিক্ষিকার ষড়যন্ত্র, ডাইনিংয়ের খাওয়ার মান খারাপসহ বিভিন্ন দাবি করে মুহুমুহু স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ থানা পুলিশের সহযোগিতা চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ বজলুর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অনেক চেষ্টা করে গভীর রাতে ছাত্রদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরদিন ১৯ জুন রোববার পুনরায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ ৫ দিনের জন্য প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষনা করে অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে যেতে বলে। ২০ জুন সোমবার অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের বাসায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে ওই অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর তিলে তিলে এই প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কয়েকজন সুযোগসন্ধানী ব্যাক্তি নিজের সুবিধা করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিষ্ঠানটি পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতাভূক্ত। ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ সম্পুর্ন্য অস্বীকার ও মিথ্যা বানোয়াট দাবি করে তিনি আরো বলেন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। সিসি ক্যামেরা দেখলেই সব বোঝা যাবে। তিনি পুরোপুরি নির্দোষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ছাত্রী জানান, রোমানা ম্যাডাম ধমক দিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে নিয়েছে। বাস্তবে কোন ঘটনা ঘটেনি। অধ্যক্ষ স্যার ও খালেদা ম্যাডাম আমাদের পিতা-মাতার মত।
আমেনা বাকী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডাঃ এম আমজাদ হোসেন বলেন, ওই অধ্যক্ষকে আপাতত ছুটি দেয়া হয়েছে এবং উপাধ্যক্ষ বিনয় কুমার দাসকে অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ বজলুর রশিদ জানান, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। বিদ্যালয় ফাউন্ডেশন কতৃপক্ষ, শিক্ষক, ছাত্রদের সাথে বিস্তারিত কথা বলি। প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বর্তমানে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান প্রধান বিনয় কুমার দাস গত ২০ জুন একটি সাধারণ ডাইরী করেছেন। প্রতিষ্ঠান থেকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ফোন করে তাদের বিদ্যালয়ে এসে সন্তানদের নিয়ে যেতে বলেছে। এসে ৫ দিনের ছুটি ঘোষনার কথা জানতে পারছি। তারাও অধ্যক্ষের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ওই অধ্যক্ষের কারণেই তারা সন্তানদের এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন। ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তাকে পুনর্বহালের আহবান জানান।
প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিনয় কুমার দাস মুঠোফোনে জানান, আমেনা বাকী ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফাউন্ডেশন যে ভাবে নির্দেশনা দিবে, তিনি সে ভাবেই কাজ করবেন। আমেনা বাকি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারি জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডাঃ এম আমজাদ হোসেনের ছেলে মোঃ আজমত হোসেন সৈকত বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে ফেলা, হোষ্টেলগুলি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করলে ওই সময় অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান শ্রেণিকক্ষ সংকট ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকটের চিন্তা করে তাতে আপত্তি জানান। এছাড়াও পুরনো ও বয়স্ক কিছু শিক্ষক ও কর্মচারীকে ছাটাই করতে চাইলে অধ্যক্ষ তাতেও আপত্তি জানান। এমন অভ্যন্তরীন কিছু বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও তার ছেলের মধ্যে মনস্তাত্মিক দুরত্ব সৃষ্টি হলে ছেলে সৈকত লন্ডল চলে যান। পরবর্তিতে পিতাপুত্রের বনিবনা হলে অধ্যক্ষকে না সরানো পর্যন্ত ছেলে সৈকত বিদ্যালয়ে আসবেনা এমন ধারণার ভিত্তিতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বর্তমানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ও কলেজে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ ও টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ আনা হচ্ছে।