অব্যাহত লোডশেডিং এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে বিদ্যুকর্মী অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ফরিদগঞ্জ জোনাল শাখা কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেছে। যদিও তারা ওই দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। মঙ্গলবার (২১জুন) ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ পল্লীবিদ্যুতের এজিএম (কম) এর দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
জানা গেছে, বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদন হলেও তার পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলাবাসী। বরং দিনের পর দিন উপজেলা গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভাতেই বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লোডশেডিং বিষয়টি তুলে ধরেন।
গুপ্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংএ তারা অতিষ্ঠ। গড়ে দিনে কয়েকঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
ধানুয়া এলাকার মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন ৪/৫ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তাহলে এতবিদ্যুৎ কোথায় যায়। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।
অগ্রণী ব্যাংক রুপসা বাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মামুন হোসেন জানান, গত একমাস ধরে আমরা বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে আমাদের সেবাদান ব্যহত হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা চালু রাখতে গিয়ে উধ্বর্ধন কতৃপক্ষের নিকট জবাবদিহির মুখে পড়েছি।
চান্দ্রা বাজারের কাঠমিস্ত্রি আমিন বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংএর কারণে আমরা যারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছি তারা দুর্ভোগের শিকার। বিদ্যুতের কারণে কাজ না হলে আমরা হাজিরা থেকে বঞ্চিত হই।
এসব কারণে গ্রামাঞ্চলে লোকজন বিদ্যুতের এই দুরাবস্থার কারণে বিক্ষুব্ধ ছিল। কয়েকদিন পুর্বে চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ ফরিদগঞ্জ জোনাল শাখার লোকজন রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা বাজারে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে মাইকিং করতে গিয়ে তারা জনরোষের শিকার হয়। পরবর্তী রূপসা জমিদারদের সদস্য ও মোতয়াল্লি সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরীর বাসায় তার উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসা হয়। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও ঘটনাস্থল থেকে এসে ভোল পাল্টে ফেলে। ঘটনার মিমাংসাকারীদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের করে।
থানায় দায়েরকৃত মামলা অনুসারে মামলায় ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার পরিবারের সদস্য সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরীকে প্রধান আসামি এবং রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান, এশিয়ান টিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি জাহিদ হোসেনসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এব্যাপারে রূপসা জমিদার পরিবারের সদস্য সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন বিক্ষুব্ধ লোকজন পল্লীবিদুতের কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা শুনে আমি তাদেরকে আমার নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে নিরাপদ রাখি। পরে আমি উপস্থিতিতেই থেকে বিষয়টির সুরাহা হয়। কিন্তু তারা এখন আমার নামেই মামলা দায়ের করলো। তিনি আরো বলেন, রূপসা এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য আমি নিজে জমি দেয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছি।
ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ মাসিক সভাতেও বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান বিদ্যুতের লোডশেডিং বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন পল্লীবিদ্যুৎ কর্র্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।
মামলা ও লোডশেডিং এর বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ সময় তিনি ফরিদগঞ্জে লোডশেডিং নেই বলে জানান। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে গত কয়েকদিন ৪/৫ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না।