ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদী সংলগ্ন রামেরকুড়া
গ্রাম। এ গ্রামে নদীর বাঁধের পাশে একটি বাড়িতে বসবাস করতেন জয়নাল। একই
বাড়িতে থাকতেন তার মা ও ছোট ভাই। খুব একটা স্বচ্ছল পরিবার নয় তাদের। কাজ
না করলে সংসারে দেখা দেয় টানাপোড়েন।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাতের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা
পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যায় মহারশি নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে জয়নালের বাড়িটি
ভেঙে যায়। চোখের সামনে বিলীন হয়ে যায় দুটি টিনের দুচালা বসত ঘর, একটি
রান্না ঘর, টিউবওয়েলসহ সব স্থাপনা। এরপর জয়নালের মা ও তার পরিবারের
সদস্যদের নিয়ে একই গ্রামের খালার বাড়িতে উঠেন। তিনি বলেন ‘মাথা গোঁজার
একমাত্র ঠাঁই বাড়িটি বন্যায় বিলীন হয়ে গেছে। দুই চোখ যেন অন্ধকার! কিছুই
ভালো লাগছে না। নতুন করে বাড়ি-ঘর তৈরি করব সেই সামর্থ্য নেই। সরকারিভাবে
খাদ্যের প্যাকেট ছাড়া আর সাহায্য পাচ্ছি না।
জয়নালের মত এবারের বন্যায় সোবাহান, সামিউল, আবু হারেজ, ফুলু মিয়ার ঘরের
মত ৩০টি ঘর বিলীনসহ অন্তত চার শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ১
হাজার ৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় ১৮টি কাঁচা ও পাকা
সড়ক এবং মহারশি নদীর বিভিন্ন স্থানে দেড় কিলোমিটার অংশ ক্ষতি হয়েছে। ১৫০
টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ঢলের পানিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে
জনপ্রতিনিধির ভাষ্য মতে, ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েকগুণ।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের বৈরাগী পাড়া এলাকার বাঢু মিয়া জানান, শুক্রবার
সকালে তার একমাত্র বসত ঘর মাটির দালানটি পড়ে যায়। এ সময় তার বসত ঘরের
আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, বন্যার পানির ¯্রােতে
তার ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের অন্তত ১০টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া
তার ইউনিয়নে কমপক্ষে ৮০টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও মহারশি নদীর
বাঁধের দুই কিলোমিটার অংশের ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে কাঁচা-পাকা
রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে
গেছে।
ধানশাইল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের
বিভিন্ন গ্রামে ৮-১০টি ঘর একেবাড়ে পড়ে গেছে ও শতাধিক বাড়ি-ঘরের আংশিক
ক্ষতি হয়েছে। উত্তর অঞ্চলের সব পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সব কয়টি
কাঁচা সড়কের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে এবং দুই-তিনটি পাকা সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে।
কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট
দু-দফা বন্যায় তার ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি-ঘরে ক্ষতি হয়েছে।
কাঁচা-পাকা ১১টি সড়কের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে দেড় শতাধিক
পুকুরের মাছ।
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল জানান, বন্যায় ১ থেকে ১০টি
বাড়ি-ঘর, পাকা সড়ক ২টি ও ৯টি ওয়ার্ডেই কাঁচা সড়কের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
একই সঙ্গে ভেসে গেছে ২৫ থেকে ৩০টি পুকুরের মাছ।
হাতিবান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার ইউনিয়নের সব
কয়টি কাঁচা সড়কেই ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে
ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা নিরুপন শেষে ঊর্ধতন কর্মকর্তার দপ্তরে প্রেরণ করা
হবে।