দীর্ধ ৬ বছর পর কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ৬জেএমবি সদস্যকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আসামিরা হলেন, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী (২৫), গোলাম রব্বানী (২২), হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলেছ (২২), মাহাবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান ওরফে মিলন (২৮), আবু নাসির ওরফে রুবেল (২০) ও রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী (৩০)। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি রিয়াজুল ইসলাম মেহেদী পলাতক থাকায় বাকী ৫জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে হত্যা মামলায় ৩০২/৩৪/১০৯ ধারায় ৬ আসামীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতের আদেশ দেন। এছাড়াও একই আদালত বিস্ফোরক আইনের ৩ ধারায় আসামি জাহাঙ্গীর ওরফে রাজিব ওরফে রাজিব গান্ধী, রিয়াজুল ইসলাম মেহেদী ও গোলাম রব্বানীকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের জেল এবং একই আইনের ৪ ধারায় ওই ৩ আসামীকে ২০ বছর কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের হাজতবাসের আদেশ দেন।
মূলত: মামলার ৭ আসামীর মধ্যে সাদ্দাম হোসেন ওরফে চঞ্চল ওরফে রাহুল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২০) মামলা চলাকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য আসামি রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী (৩০) পলাতক রয়েছে। অপর ৫ আসামিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণার পর পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামিরা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করে কান্না করতে থাকেন। এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে দাবী করেন আমরা ঘটনার কিছুই জানি না। আমরা নির্দোষ। আদালত মুলতবী ঘোষণা হলে তারা চিৎকার করে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার এই অন্যায় আদেশের জন্য আল্লাহ আপনাকে ধ্বংস করবে। তারা বার বার এই কথা বলতে থাকেন।
এর আগে আদালত পাড়ায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্রতিটি মানুষকে সার্চ করে তারপর আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে কুড়িগ্রাম জেল কারাগার থেকে আসামীদের কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে আদালতে হাজির করা হয়। মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যে রায় পরে শোনান বিজ্ঞ বিচারক মো. আবদুল মান্নান। রায় ঘোষণার পর পর আসামীদের কুড়িগ্রাম কারাগারে ফেরৎ পাঠানো হয়। কুড়িগ্রামের এই আলোচিত হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হবে এ খবর পেয়ে মিডিয়া কর্মীরা সকাল ১১টা থেকে আদালত চত্বরে অবস্থান নেয়। বার বার সময় পরিবর্তন হয়ে বিকাল ৩টায় এজলাসে বসেন বিচারক।
মামলায় সরকারী পক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন আদেশের কথা নিশ্চিত করে জানান, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের গাড়িয়াল পাড়া এলাকায় প্রাত:ভ্রমণের সময় ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান মৃুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে ককটেল ফাঁটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এ ব্যাপারে একটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ ১০ জেএমবি সদস্যকে অভিযুক্ত করে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশীট জমা দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করতে এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। যা আসামিরা তাদের জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে তারা তাদের এই জবানবন্দী প্রত্যাহারও করেননি। এতেই প্রমাণ হয় সন্দেহাতীতভাবে তারা এই হত্যাকান্ড সংঘঠিত করেছে। দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহন এবং প্রমাণাদির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান এ রায় দেন। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক।
অপরদিকে আসামি পক্ষের রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত লিগ্যাল এইডের অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমরা হাতে পাইনি। রায়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আসামিরা চাইলে রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।