দেশের মানুষ ভালো নেই। নাগরিক প্লাটফর্ম বলছে, মধ্যবিত্তরা এখন বৈষম্যমূলক বাজেটীয় পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আক্রমণের মুখে পড়ছে। এ আক্রমণে মধ্যবিত্তের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্যই দেওয়া হয়েছে। বাজেটে ধনীদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্তদের জন্য তেমন কিছু নেই। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে মধ্যবিত্তরাই বেশি চাপে পড়েছে। সর্বশেষে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মধ্যবিত্ত ও গরিবরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট মধ্যবিত্তের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয় নি। কারণ সংসদে মধ্যবিত্তের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই। সেখানে এখন টাকা ওয়ালারা বলে আছেন। ফলে বাজেটে অবহেলা করা হয়েছে মধ্যবিত্তদের। বরং অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় মধ্যবিত্তদের কর ফাঁকিবাজ হিসেবে চিহিৃত করেছেন।
অবশ্য এ কথা ঠিক যে এবার সংকটপূর্ণ অর্থ বছরের বাজেট দেওয়া হয়েছে। অথচ মধ্যবিত্তদের জনজীবনের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। আগামী অর্থ বছরে সংকট আরও বাড়তে পারে। গত ১০-১৫ বছরে অর্থনীতিতে এমন চাপ দেখা যায় নি। অথচ বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে অধিকাংশ মনে করেন, এটি অনৈতিক। একজন একবার চুরি করল, আবার সেই টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়ে দিল। এই দু’বার চুরির অপরাধীকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলো। অথচ সৎ করদাতারা বছরের পর বছর ৩০-৩২ শতাংশ কর দিয়েছে। বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনা অলীফ কল্পনা। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
যেমন সবাই গ্রহণ করেন নি তেমনি বিদেশ থেকে টাকা পাচারকারীরাও টাকা ফেরত আনবেন না।
অর্থ ফিরিয়ে আনা কতটা কঠিন সে প্রসঙ্গে জার্মানির ইহুদিদের একটি উদাহরণ দিয়ে অন্য এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা-মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, হিটলার ক্ষমতায় আসার পর ইহুদিরা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করে। তখন তারা নিজেদের অর্থ ও সোনা সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত রাখে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের পর সুইস ব্যাংকগুলো সেই অর্থ ফেরত দেয় নি। বহুকাল পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি লবির চাপে সুইস ব্যাংকগুলো সেই অর্থ ও সোনার খবর জানাতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের সেই ক্ষমতা নেই। ফলে আমাদের পক্ষে সেই অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
এমন বক্তব্য থেকে বুঝা যায় সরকারের মধ্যেও এ নিয়ে সমালোচনা আছে। তাই পাচার-কৃত টাকা ফিরত আনার সুযোগ না দিয়ে বরং যাতে কেউ আর টাকা পাচার করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া এখন সময়ের দাবি। অন্যদিকে বাজারে যে ভাবে নিত্য পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে মধ্যবিত্তের জীবন খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রন করে জনজীবনে স্বস্থি ফিরিয়ে আনা। দেশে সুন্দর সুন্দর মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলেই উন্নত দেশ হওয়া যায় না। জীবন কতটা স্বস্তির তার ওপর নির্ভর করে উন্নত দেশের চিত্র। কাজেই মূল্যস্ফীতি রোধ করে জনজীবন সহজ করা খুবই জরুরি।