বন্যা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বরং বন্যা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম গুমের এক যুগপূর্তি উপলক্ষে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। ফখরুল বলেন, গত ১২ বছর ধরে নিখোঁজ চৌধুরী আলম। এখনো পর্যন্ত তার কোথাও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত বিএনপির ৬০০ এর বেশি নেতাকর্মী গুম হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আইনে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে জোর করে যদি কাউকে নিয়ে যাওয়া হয় সেটা মানবাধিকার লংঘন, অপরাধ। এতেই প্রমাণিত হয় এই সরকার ফ্যাসিবাদী। তাদের ১৫ বছর দুঃশাসনে বাংলাদেশের কত মানুষ পরিবার হারা হয়েছে, সন্তানহারা হয়েছে, কতজন স্বামীহারা হয়েছেন, কতজন পুত্রহারা হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন- গুম, হত্যা, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করা, ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য এ সরকারের আশু পদত্যাগ দাবি করছি। পদত্যাগ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনেরও দাবি জানাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, চৌধুরী আলমের গুম হয়ে যাওয়া শুধু পরিবারের ক্ষতি নয়, শুধু বিএনপির ক্ষতি নয়, আমি মনে করি এটা দেশ ও জাতির ক্ষতি। চৌধুরী আলম একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন। সে কারণে তার অনুপস্থিতিতে আমাদের একটা বিরাট শূন্যতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন চৌধুরী আলমকে সুস্থ শরীরে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন বিরোধী আন্দোলন দমন করার জন্য এ গুম, খুন, বেআইনিভাবে আটক করে হত্যা করা, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এমনভাবে বেড়েছে, যা কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজে হতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন থেকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তখন থেকে তারা এ দেশের মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। জীবনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের গুম করা হয়েছে তাদের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সম্পদ, ব্যাংকের অর্থ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট পর্যন্ত তারা তুলতে পারছে না। তারা কোনো রকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। চৌধুরী আলম মোটামুটি সচ্ছল থাকায় তার পরিবার, ছেলে-মেয়েরা টিকে আছেন। এমনও পরিবার আছে যাদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটেনা। শুধু গুম নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে আমি বলেছিলাম- এ সরকারকে গণশত্রু হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। ফখরুল বলেন, আমি গতকাল (বুধবার) সিলেটে গিয়েছিলাম। সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিজের চোখে না দেখলে ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না। মানুষ যে কষ্টে আছে। তাদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। অথচ প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে গিয়ে ঘুরলেন। সার্কিট হাউজে নেমে সেখানে দশ জনকে টোকেন ত্রাণ দিয়েছেন। তারপর বলেছেন সব হয়ে যাবে। কিন্তু আমি গতকাল রাতে এসেছি তখন পর্যন্ত খবর পেয়েছি সেগুলো কিছুই করা হয়নি। সেনাবাহিনী নামার পরে কিছু কাজ হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি কাজ করছে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। তারা নৌকা ভাড়া করে নিজেদের পয়সা দিয়ে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। তারা ব্যাপকহারে কাজ করছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এরা প্রত্যেকে মিথ্যাবাদী। এদের মতো মিথ্যা কথা কেউ বলতে পারে না। অনর্গল মিথ্যা কথা বলে এরা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুচলেকা দিয়ে ওয়ান ইলেভেনের পরে কে আমেরিকায় গিয়েছিলেন সেটা আমরা সবাই জানি। জাতির সঙ্গে বেইমানি তার (শেখ হাসিনা) আজকের কাজ না। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে উনি প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন- এরশাদের সঙ্গে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। তার দু’দিন পরেই উনি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও গুম হওয়া চৌধুরী আলমের স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী, বড় ছেলে আবু সাইদ চৌধুরী, বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তার, ছোট মেয়ে মাহফুজা আক্তার, ছোট ছেলে আবু সাদাত চৌধুরী, ছোট চাচা খুরশীদ আলম মিন্টু, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা এমএ হান্নান প্রমুখ।