করোনার প্রকোপ কমে এলেও আবার তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন আক্রান্তের হার কম থাকলেও আবার তা বেড়েছে। মৃত্যু শূন্য বেশ কিছু দিন গেলেও এখন মৃত্যু তালিকা দৈর্ঘ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে ডেঙ্গুর বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা শোনা যাচ্ছে। প্রলম্বিত বর্ষা মৌসুম, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা করছেন। চলমান সময়ে ডেঙ্গু জ¦রের বাহক এডিস মশার প্রজনন বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন দু’টি কীটনাশক ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও এডিস মশা ধ্বংস করা যাচ্ছেনা। এজন্য মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে হবে। মশার লার্ভা নষ্ট করতে পারলেই ৮০ শতাংশ কাজ হবে।
এজন্য নাগরিক জীবনের ছাঁদ বাগানে, পুরাতন গাড়ির টায়ার ও এসির পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। কিন্তু কেউ সচেতন হচ্ছেন না। বরং উল্টো দু’সিটির মেয়রদের গালাগালি করেন। সিটি মেয়ররা সবাইকে সচেতন করতে নানা প্রচারণার পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। কেমন যেন সব কিছু গা সওয়া হয়ে গেছে। ধানমন্ডির মেট্রোল হাসপাতালে এ বছর প্রথম ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে গত ২২ জুন। ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়লে আগামীতে আরো মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অথচ একটু সচেতন হলেই ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র ধনস্য করে সবাই নিরাপদ হতে পারি। কিন্তু নিজের ও আত্মীয়দের আক্রান্তের কথা বিবেচনা করে কেউ আর বাড়ির ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র গুলো ধ্বংস করছি না।
সবার ধারনা ছিল ডেঙ্গুর বিস্তার মহানগর কেন্দ্রিক। কিন্তু না। ডেঙ্গু এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ডেঙ্গুর হটস্পট বলা যায়। তাই ডেঙ্গু রোধে জন সম্পৃক্ততা এখন সময়ের দাবি। প্রাক বর্ষা জরিপে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী অ্যাসিড মশার প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছিল। আর বর্ষার পানি পথে ঘাটে, বাড়ির ছাদে আটকে থাকায় জীবাণু এডিস মশা নির্বিঙ্গে জন্ম নিয়ে মানুষকে ডেঙ্গু আক্রান্ত করবে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে।
তাই ব্যক্তি সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের জন্য প্রচার প্রপাকান্ডা চালাতে হবে। সিটি কর্পোরেশনকে তাদের ভ্রাম্যমান আদালত যথাযথ পরিচালনা করতে হবে। না হলে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা আগামী দিনে আসছে তা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া করোনা আক্রান্ত হবার আগে প্রতিরোধে নিজেদের সচেতন হতে হবে। করোনা টিকা গ্রহণ করতে হবে। যারা দু’ ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের বুষ্টার ডোজ নেবার চেষ্টা করতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে জনসমাগম। বিগত দু’ বছর করোনা আমাদের খুব ভুগিয়েছে। তার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। একই সাথে ডেঙ্গু থেকেও নিজেদের নিরাপদ রাখতে চাই। করোনা ও ডেঙ্গুর যৌথ আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চাই।