জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমার পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এক কথায় বঙ্গবন্ধু আমাদের বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। যে দেশে আজ আমরা স্বাধীনভাবে সবকিছু বলতে ও করতে পারছি।
সে সময় (১৯৭১ সালে) বজ্রকন্ঠে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষনে বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বঙ্গবন্ধুর জ¦ালাময়ী ভাষনে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারেনি দেশ-বিদেশের শত্রুরা। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
যার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তাকে কি কেউ দাবায়ে রাখতে পারে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীরা দাবায়ে রাখতে পারেনি। তার (প্রধানমন্ত্রী) অসীম সাহসের প্রতীক হয়ে আজ উন্মুক্ত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ-বিদেশের শত্রুদের পরাস্থ করে এ দেশ যেমনি স্বাধীন হয়েছে, তেমনি আজ পূর্ণরায় দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীদের পরাস্থ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন জয় হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রমান করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অগ্রযাত্রাকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। তেজতিপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বলেছেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বরিশাল উত্তর জনপদের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম পদ্মা সেতু উদ্বোধণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সেই খুশিতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর মনে বইছে আনন্দের বন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসকিতায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সেতু উদ্বোধণের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরন হয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে সর্বত্র খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরনের স্বাক্ষী হতে ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধণকে স্মরনীয় করে রাখতে কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে স্বাধীনতার প্রতীক লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বরিশাল বিভাগের লক্ষাধিক মানুষ আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মন্ত্রী আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধণী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব নেতাকর্মীরা ২৪ জুন রাতে ৬০টি লক্ষযোগে বরিশাল নৌ-টার্মিনালসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী জনসভা শেষে দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীরা শনিবার দুপুরের পর পূর্ণরায় লঞ্চযোগে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্বাক্ষী হতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের পাশাপাশি যোগদান করেছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মীরা। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় প্লাট ফরম বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফরের নেতৃত্বে দক্ষিণাঞ্চলের তিন শতাধিক গণমাধ্যম কর্মীরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণ দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। সকালে নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে দৃষ্টিনন্দন বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী নানান সাংস্কৃতিক আয়োজন।
জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ট্রাকে ট্রাকে বাউল সংগীত ও সন্ধ্যায় লেজার শো ও আতশবাজিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যা আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত চলমান থাকবে। শনিবার সকাল ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়। যেখানে বড় পর্দায় অতিথিরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের লাইভ দেখেন। একইদিন সকালে জেলা পুলিশের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গনে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধণ করে রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান। অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের এমটি গেট থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করেন।
জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী বরিশাল। তাই এখানকার অনুষ্ঠানও ইতিহাসের অংশ হবে। এ জন্যই ব্যতিক্রম ও স্মরণীয় করে রাখার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একইদিন সকালে গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের আয়োজনে আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালি শেষে শহীদ সুকান্ত বাবু মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ^াস। ওইদিন বিকেলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণকে স্মরনীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদের আয়োজনে গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজন করা কবিতা উৎসব।