ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনার পরও বন্ধ হচ্ছেনা ঝিনাইদহের শৈলকুপার কুমার নদে নিষিদ্ধ চায়না ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার। ফলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে জালের সংখ্যা। এরইমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল জব্দ করলেও জালের ব্যবহার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
উপজেলার গাড়াগঞ্জ থেকে শুরু করে আবাইপুর গ্রাম পর্যন্ত ২৫ কি.মি. জায়গা জুড়ে নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। হাজার হাজার ফুট নিষিদ্ধ চায়না জাল ২০০ থেকে ৩০০ গজ পর পর পেতে রাখা হয়েছে। ডিঙি নৌকা নিয়ে প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হয়ে যায় এই জাল পাতার প্রক্রিয়া এরপর সারারাত পেতে রাখার পর সকাল থেকে চলে জাল গোছানোর পালা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজারে জাহিদ বিশ^াস হার্ডওয়্যার,মোস্তফা স্টোর, কসমেটিকস ব্যবসায়ী চিত্ত কুমার সহ অনেকেই চায়না জাল ও কারেন্ট জাল দেদারসে বিক্রি করে আসছে। অভিযানের সংবাদ পেলেই এসব ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ গোডাউনে তালা মেরে সটকে পড়ে। এসব ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নিজ বাড়িতে চায়না জাল রেখে ক্রেতার নিকট বিক্রি করে থাকে বলে অভিযোগ। প্রতিদিন পাংশা,কুমারখালী,কালুখালী,শ্রীপুর সহ বিভিন্ন এলাকার লোকেরা এদের কাছ থেকে কারেন্ট ও চায়না জাল কিনে নিয়ে যায়। জাল কিনতে আসা কালীখালী উপজেলার কাওখোলা গ্রামের শফিক জানান, প্রশাসনের ভয়ে আমাদের উপজেলার কোনো হাট-বাজারে এই জাল বিক্রি হয়না। তাই আমি লাঙ্গবাঁধ বাজারে এসে জাহিদ বিশ^াস হার্ডওয়্যার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি চায়না দুয়ারী জাল কিনেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক জাল ব্যবসায়ী জানান, আমরা প্রশাসনের সাথে সক্ষ্যতা রেখেই জালের ব্যবসা করে আসছি। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা হলেও আমরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকি।
জানা যায়, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার খবর পেলেই এসব অসাধু মাছ শিকারীরা জাল নদী থেকে তুলে বাড়িতে বা সুরক্ষিত স্থানে লুকিয়ে রাখে। পরে ভ্রাম্যমান আদালত চলে গেলে আবার নদীতে পেতে রাখে। বর্তমানে অনেকেই এই জাল নিয়ে এলাকার বিভিন্ন খালে-বিলে মাছ শিকারে নেমে পড়েছে।
এই জালে ধরা পড়ছে বিভিন দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় মাছ। শুধু মাছই নয় নদীতে থাকা কোন জলজ প্রাণীও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মাছের ডিমও ছেকে তোলা হচ্ছে এই চায়না জাল থেকে।
এতে করে প্রাকৃতিক সব ধরনের দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে চিংড়ি, পুটি, বুই কাতলা ,টেংরা, কই, শিং ,মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকি থেকে শুরু করে ছোট বড় কোন মাছই রেহাই পাচ্ছেনা এই নিষিদ্ধ চায়না জাল থেকে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে কুমার নদ। দেশীয় মাছ রক্ষার্থে প্রশাসনিক ভূমিকা কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সূশীল সমাজ।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার একটা বে-আইনী কাজ, আমরা আগেও কয়েক বার অভিযান চালিয়েছি তারপরও তা রোধ করা যাচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়ি আবারও কুমার নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা বলেন,ইতিমধ্যে আমরা কুমার নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি, প্রয়োজনে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আবারও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।