জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাঁধা দিয়েছিল, নিজেদের অর্থায়নে দেশের টাকায় স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু নির্মানের মাধ্যমে আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি’। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ও সাহসের মুল উৎস হচ্ছে এ দেশের জনগন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, এ দেশের জনগনের অকৃত্রিম ভালবাসায় পদ্মা সেতু নির্মানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক বাণী আবারও প্রমানিত হয়েছে, যতো ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, ইনশআল্লাহ আর ভবিষ্যতেও পারবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আসুন, দেখুন পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না?’
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের পর শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছিলেন, তাদের ঘর করে দিয়েছি, জমি দিয়েছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একটা কথা মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। এই পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাকে অনেকে অপমান করেছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করবই। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা, শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমি আপনাদের পাশে আছি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। তাকে বলব, আসুন, দেখুন পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না? ২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। তখন তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ কোনো দিন নাকি পদ্মা সেতুর কাজ করতে পারবে না।
উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, এই আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে সম্ভব হয়েছে। সারাদেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু প্রমাণ করে জনগণই বড় শক্তি।
অপমানের একটা জবাব দিতে পারলাম ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম- বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করেছে আমরা নিজের টাকায় এই পদ্মা সেতু তৈরি করবো, তা করেছি। জনতার শক্তিই ছিলো আমার বড় শক্তি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ দিন। আমরা কিছুক্ষণ আগেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার যাত্রা যখন শুরু করলেন- মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ করেন। যখন দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তৃণমুল পর্যন্ত ক্ষমতা নিয়ে যান-দুর্ভাগ্য আমাদের জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলো। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমি বিদেশে ছিলাম। দেশে আসতে পারিনি। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে। শত বাঁধা পেরিয়ে আমি আপনাদের মাঝে আসি। আমার লক্ষ্য জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকে আমরা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজকে আমরা বিনাপয়সায় বই দিচ্ছি। প্রতিটি এলাকায় স্কুল ও কলেজ করে দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়ে শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ওয়াদা ছিলো প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ¦লবে। আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে আমরা বিদ্যুত পৌঁছে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে মোবাইল ফোন। সবাই আজকে অনলাইনে কেনাবেচা করতে পারেন- সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। উন্নত জীবন যাতে সবাই পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এই একটা কারণে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়েছে। নির্বাচিত হয়েছি এবং এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানীগুণী লোক ছিলো, অর্থনীতিবিদ, বড় বড় আমলা ছিলেন সবাই বলেছেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু সম্ভব নয়। আজকে নিজেদের টাকায় কিভাবে করতে পারলাম? এই বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন ওই ড. ইউনুসকে গ্রামীন ব্যাংকের এমডি থেকে চলে যেতে হলো। তখন সে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আমেরিকায় তদ্বির করে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিলো। বলল, দুর্নীতি হয়েছে। কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতু আমাদের প্রাণের সেতু। যে সেতুর সাথে আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেই সেতু করতে গিয়ে কেন দুর্নীতি হবে? তারা (বিশ্ব ব্যাংক) টাকা দেয়নি। অথচ দুর্নীতির ষড়যন্ত্র বলে টাকা বন্ধ করে দিল। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম টাকা বন্ধ করেছো ঠিক আছে। বাংলাদেশ বসে থাকবে না। আমরা নিজের টাকায় এই পদ্মা সেতু তৈরি করবো। অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে। অনেক কথা বলেছে যে, এই সেতু নাকি আমরা করতেই পারবো না। আমি আগেই বলেছি আমার একমাত্র শক্তি আপনারাই। আমার একমাত্র শক্তি বাংলার জনগণ। বাবা-মা-ভাই-বোন সব হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে ফিরে এসেছিলাম এই বাংলাদেশে। সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে বেরিয়েছি। নৌকায় করে এক একটা এলাকায় গিয়েছি। কাঁদা-পানিতে নেমেছি। মিটিং করেছি। আমরা রাস্তাঘাট-ব্রিজ করেছি। সবার জন্য যোগাযোগ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের দোয়ারিকা, শিকারপুর, গাবখান থেকে শুরু করে পায়সারহাট ও কুয়াকাটা পর্যন্ত সেতু বানিয়ে দিয়েছি। যাতে এ এলাকার মানুষ নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে।
প্রধামন্ত্রী বলেন, এই পদ্মা নদী খর¯্রােতা। এই নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবেনা। বাবা-মাকে হারাতে হবেনা। ভাই-বোনকে হারাতে হবেনা। আজকে আপনার নির্বিঘেœ চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আর যারা বাঁধা দিয়েছিল-এই পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে তাদের একটা জবাব আমরা দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। এখানেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। শিল্প কলকারাখানা হবে। আমাদের ফসল উৎপাদন হবে। সেই ফসল আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারবো। দেশে-বিদেশে রফতানি করতে পারবো। আমাদের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে দেশে-বিদেশে রফতানি করতে পারবো। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ ঘুচে যাবে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। অনন্ত ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। সেটা আমরা করতে পারবো। এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। তিনি আরও বলেন, আমাদের পদ্মা সেতু করতে গিয়ে অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার সাথে সাথে আমাদের উপদেষ্টা, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সচিব মোশাররফ হোসেনসহ অনেককে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপমান করা হয়েছে। আমার ছেলে-মেয়ে সজিব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আমার বোনের ছেলে ববিসহ অনেককে কত মানসিক যন্ত্রণা তারা দিয়েছে। কিন্তু আমরা পিছু হঠিনি। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিলো-এই সেতু নির্মাণ করবো। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবো। আমরা তা করতে পেরেছি।
দেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পরে না থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আজকে সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব। বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয়, সেজন্য যার যেটুকু জমি আছে, যে যা পারেন তাই উৎপাদন করবেন। নিজে খাবেন অপরকে দেবেন। বাজারে পাঠাবেন। কোনো জায়গায় এক ইঞ্চি জমি বাদ না যায় সেভাবে কাজ করবেন। এই দেশ আপনাদের। এই দেশ আমাদের। জাতির পিতা দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে। আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝে খুঁজে পেয়েছি বাবা ও মায়ের স্নেহ। আপনাদের পাশে আমি আছি। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত রয়েছি। এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম। আপনাদের জন্য প্রয়োজনে আমার নিজের জীবনটা বিলিয়ে দেবো। সবার কাছে দোয়া চাই যেন পিতার স্বপ্ন পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এ সময় জনসভা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য শাজাহান খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধণী জনসভায় বরিশাল বিভাগ থেকে আমাদের এক লাখ মানুষের অংশগ্রহণ করার টার্গেট ছিলো। তবে সেই টার্গেট অনেক ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এক লাখ মানুষের যাতায়াতের জন্য আমাদের আগে ঠিক করে রাখা ৬০টি বিলাস বহুল লঞ্চের মধ্যে বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যায় ১০টি লঞ্চ। বাকীগুলো বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ছেড়ে আসে। তবে প্রতিটি এলাকার লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। যেকারণে লঞ্চে আসার সুযোগ না পাওয়ায় অনেক উৎসুক জনতা সড়ক পথে স্বপ্নের স্বাক্ষী হতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধণী জনসভায় অংশগ্রহণ করতে আসা গৌরনদীর প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম হেলাল মিয়া বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন গর্ব করে বলতে পারে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে আমার পূর্ব পুরুষরা উপস্থিত ছিলেন। এজন্য ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসেছি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাচ্ছন্দে ও নিরাপদে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে বরিশাল বিভাগের এক লাখেরও অধিক উৎসুক মানুষ যেন যার যার ঘরে ফিরতে পারেন এজন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
দক্ষিণাঞ্চলে বইছে আনন্দের বন্যা ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমার পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এক কথায় বঙ্গবন্ধু আমাদের বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। যে দেশে আজ আমরা স্বাধীনভাবে সবকিছু বলতে ও করতে পারছি।
সে সময় (১৯৭১ সালে) বজ্রকন্ঠে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষনে বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বঙ্গবন্ধুর জ¦ালাময়ী ভাষনে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারেনি দেশ-বিদেশের শত্রুরা। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
যার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তাকে কি কেউ দাবায়ে রাখতে পারে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীরা দাবায়ে রাখতে পারেনি। তার (প্রধানমন্ত্রী) অসীম সাহসের প্রতীক হয়ে আজ উন্মুক্ত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ-বিদেশের শত্রুদের পরাস্থ করে এ দেশ যেমনি স্বাধীন হয়েছে, তেমনি আজ পূর্ণরায় দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীদের পরাস্থ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন জয় হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রমান করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অগ্রযাত্রাকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। তেজতিপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বলেছেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বরিশাল উত্তর জনপদের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম পদ্মা সেতু উদ্বোধণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সেই খুশিতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর মনে বইছে আনন্দের বন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসকিতায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সেতু উদ্বোধণের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরন হয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে সর্বত্র খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরনের স্বাক্ষী হতে ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধণকে স্মরনীয় করে রাখতে কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে স্বাধীনতার প্রতীক লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বরিশাল বিভাগের লক্ষাধিক মানুষ আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মন্ত্রী আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধণী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব নেতাকর্মীরা ২৪ জুন রাতে ৬০টি লক্ষযোগে বরিশাল নৌ-টার্মিনালসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী জনসভা শেষে দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীরা শনিবার দুপুরের পর পূর্ণরায় লঞ্চযোগে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্বাক্ষী হতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের পাশাপাশি যোগদান করেছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মীরা। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় প্লাট ফরম বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফরের নেতৃত্বে দক্ষিণাঞ্চলের তিন শতাধিক গণমাধ্যম কর্মীরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণ দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। সকালে নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে দৃষ্টিনন্দন বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী নানান সাংস্কৃতিক আয়োজন।
জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ট্রাকে ট্রাকে বাউল সংগীত ও সন্ধ্যায় লেজার শো ও আতশবাজিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যা আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত চলমান থাকবে। শনিবার সকাল ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়। যেখানে বড় পর্দায় অতিথিরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের লাইভ দেখেন। একইদিন সকালে জেলা পুলিশের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গনে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধণ করে রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান। অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের এমটি গেট থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করেন।
জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী বরিশাল। তাই এখানকার অনুষ্ঠানও ইতিহাসের অংশ হবে। এ জন্যই ব্যতিক্রম ও স্মরণীয় করে রাখার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একইদিন সকালে গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের আয়োজনে আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালি শেষে শহীদ সুকান্ত বাবু মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ^াস। ওইদিন বিকেলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধণকে স্মরনীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদের আয়োজনে গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজন করা কবিতা উৎসব।
পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনা ॥ কী নেই পদ্মার দক্ষিণ পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল থেকে শুরু করে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, সমুদ্রবন্দর পায়রা, বাংলার বাঘ শেরেবাংলার জন্মভূমি এবং অপার সৌন্দর্যের বিস্তর্ণ উপকূল। প্রচুর সম্ভাবনা আর ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর অসংখ্য স্থাপনা বুকে ধারণ করলেও কেবল প্রমত্তা পদ্মার কারণে সবকিছুই ছিলো নক্ষত্র সমান দূরত্বে। পদ্মার বিশাল নদী পাড়ির ঝক্কি এড়াতে অনেকেই আসতে চাইতেন না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায়। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যুগের পর যুগ পিছিয়ে থাকার সেই কষ্ট দূর হয়েছে ২৫ জুন। উদ্বোধন হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ সেতুকে ঘিরে তাই এখন শিল্পবাণিজ্য আর পর্যটনখাতে নয়াবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মানুষ। পুরোদমে চলছে সম্ভাবনার নতুন ভুবনে প্রবেশের প্রস্তুতি।
সূত্রমতে, ঢাকা থেকে সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় পাঁচশ’ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে মাত্র ২৬৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থান সাগরকন্যা কুয়াকাটার। এত কাছে থেকেও কুয়াকাটা পর্যটকদের মনোযোগ কাড়তে পারেনি শুধুমাত্র পদ্মা নদীর কারণে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের (কুটুম) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, রাজধানী তথা সারাদেশ থেকে পদ্মা আমাদের আলাদা করে রেখেছিল। এই নদীর কারণে কুয়াকাটায় বিনিয়োগে অত্যন্ত ধীরগতি ছিলো। আমাদের সেই আক্ষেপের দিন ফুরোচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার মধ্যে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠবে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিপুল বিনিয়োগের আশা নিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং শিল্প গ্রুপগুলো এখানে আসতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়াকাটার পাশাপাশি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্থাপিত পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চবাসী। বর্তমানে অপারেশনাল কার্যক্রমে থাকা পায়রাবন্দরে নিয়মিত ভিড়ছে সমুদ্রগামী জাহাজ। মোটা অঙ্কের রাজস্বও আয় করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সাবেক পরিচালক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় পায়রাবন্দরের দূরত্ব অর্ধেক। সাগরপাড় থেকে পণ্য পৌঁছাতেও কম সময় লাগবে। সেই বিবেচনায় পদ্মা সেতুর কারণে পায়রাবন্দরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে পদ্মা সেতুর কারণে মোংলা থেকেও খুব কম সময়ে আমদানি পণ্য ঢাকায় পৌঁছ যাবে। সেকারণে মোংলা বন্দরেরও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। সবকিছু মিলিয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে আকাশ সমান উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দর্শনীয় স্থান ॥ বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র জলের রাজ্য। বরগুনার তালতলীতে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত এবং টেংরাগিরি বনাঞ্চল, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে জাহাজ মারা সৈকত, গলাচিপার কলাগাছিয়া সাগরপাড়, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার হরিণপালা এবং বরগুনার পাথরঘাটার হরিণঘাটা। ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় নয়নাভিরাম ছৈলারচর। বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক বিবির পুকুর, ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যান, চারণ কবি মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ি, কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদ, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ি, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়ি, মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া জমিদার বাড়ি, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী জমিদার বাড়ি ও পাদ্রিশিবপুর গীর্জা, গুটিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মাহিলাড়ার সরকার মঠ, শের-ই-বাংলা জাদুঘর, শংকর মঠ, মাধবপাশার জমিদার বাড়ি, কবি বিজয় গুপ্তর মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত মনসা মন্দির, মুঘল আমলের কমলাপুর মসজিদ ও আল্লাহর মসজিদ, লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য সাতলার বিল। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশার দুর্গা সাগর। সাগরকন্যা কুয়াকাটার বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা ফাতরার চর, নয়ানাভিরাম সোনারচর, পানি জাদুঘর, চর বিজয়, লেবুর চর, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকত, শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, বরগুনার ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ, তালতলীর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ একাডেমী, সোনাকাটা সৈকত। এ ছাড়া বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ ভোলা জেলার দর্শনীয়স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-বিখ্যাত মনপুরা দ্বীপ, শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র, চর কুকরী মুকরী, শিশু পার্ক, জ্যাকব টাওয়ার, তারুয়া সমুদ্র্র সৈকত, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী, ঢালচর, তুলাতলী ইকোপার্ক ইত্যাদি।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর নিজস্ব সংস্কৃতিতে ভরপুর বিভাগের নাম বরিশাল। মনীষী, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিক ও দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদরা জন্মগ্রহণ করেছেন এই জনপদে। এখানে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে অদ্যবর্ধি গড়ে উঠেছে অগণিত ঐতিহাসিক আর দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও এই বিভাগে রয়েছে একাধিক পর্যটনকেন্দ্র। যা দেখে ১৯৭৩ সালের ১ লা জানুয়ারি বরিশাল নগরীর তৎকালীন বেলেস্ পার্কে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান) দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি জনসভায় বলেছিলেন, বরিশালের পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে আধুনিকমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণ করার পর বরিশালের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকতার স্বপ্নপূরণ থমকে যায়। বর্তমানে সামান্য সংখ্যক পর্যটক এসব দর্শনীয়স্থানে ঘুরতে আসে। এর পেছনেও অন্যতম কারণ ছিলো পদ্মা নদী।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, পুরো দক্ষিণাঞ্চলই একটা পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার খাল-নদী-জঙ্গল আর সাগরপাড়ের বিস্তীর্ণ উপকূল ঘিরে কেবল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। পৃথিবীতে এমন দেশও রয়েছে যারা কেবল পর্যটন শিল্পের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সেখানে আমরা গর্ব করে বলতে পারি, পদ্মা নদীর কারণে এত বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা দক্ষিণাঞ্চল এবার পর্যটন সেক্টরে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতায় পদ্মা সেতুর কারণে এবার পুরো দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। তিনি আরও বলেন, কেবল পর্যটন খাত নয়; পদ্মা সেতু যে কীভাবে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে তা আমরা এখন পর্যন্ত কল্পনাও করতে পারছি না।