ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হয়েছে রাজশাহীবাসীও। দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে রাত পর্যন্ত বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে করা হয় বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন। যে আয়োজনে যোগ দিতে শনিবার (২৫ জুন) সকাল থেকে মহানগরীর কামারুজ্জামান চত্বরে জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার হাজারও মানুষ। এরপর সেখান থেকে বাদ্য বাজিয়ে শুরু হয় বিশাল এক শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিন করে রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ করে। এরপর স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় সেতুর উদ্বোধন দেখার পাশাপাশি সকলেই দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শোভাযাত্রায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ (এনডিসি), রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) জয়দেব কুমার ভদ্র, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল, পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেতু উদ্বোধনের পর ঐতিহাসিক এই ক্ষণে উপস্থিত রাজশাহী জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মিষ্টিমুখ করেন।
রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি উপভোগকালে উপস্থিত অনেক মানুষের মুখে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আরও অনেক সাফল্যের কথা। বলেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি বিশেষ অঞ্চলেরই নয়, এটি সমগ্র দেশের উন্নয়নের প্রতীক। বাঙালির দীর্ঘ সময়ের স্বপ্নের এই সেতু এখন দৃশ্যমান। যেটি আজ সবার হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত করেছে।
আর নিজস্ব অর্থে নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। শনিবার বিকেলে রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তার প্রেরিত অভিনন্দন বার্তায় মেয়র লিটন বলেন, নিজস্ব অর্থে নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে নৎসাৎ করে বিশ্বের বিস্ময় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখালেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র লিটনের নির্দেশনায় যোগ দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নগর ভবন বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে নগর ভবনে ড্রপডাউন, সাহেব বাজার ও রেলস্টেশন এলাকায় টাঙানো হয় ব্যানার।
ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে এদিন সন্ধ্যা ৬টায় আয়োজন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আর রাত ৮টায় রাজশাহীর আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে আনন্দ উদযাপনে ছিল আতশবাজি। এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনস্থলে সকলেরই উপস্থিতির সুযোগ নেই। যে কারণে জাঁকজমকপূর্ণভাবে আনন্দটি উপভোগ করতে রাজশাহীবাসীর জন্য এমন আয়োজন সকলের মন ভরিয়ে দিয়েছে বলে আমি বিশ^াস করি।
অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শনিবার নানা আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদ্যাপন করা হয়। এই উপলক্ষে এদিন সকাল ১০টা থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে সংগীত বিভাগের উপস্থাপনায় পদ্মা সেতুর থিম সং ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বেলা সাড়ে ১০টায় এক আনন্দ র্যালি রাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পা-েসহ অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে।
আর গর্বের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক আনন্দ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। রুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে র্যালিটি বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এসে শেষ করে। এরপর অডিটোরিয়ামের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও গর্বের পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করেন। এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডীনগণ, বিভিন্ন্ বিভাগ, দপ্তর, শাখা প্রধানগণ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগ রুয়েট শাখার নেতৃবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।