গত (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের আগামী প্রজন্ম পথ-শিশুদের ৫৮ শতাংশ কোনো না কোনো মাদক নেয়। আর দেশের ২১ শতাংশ পথ শিশুকে মাদক বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ তথ্য মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ( ডিএনসি ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পথ-শিশুদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আসক্তি গাজায়। কারণ সহজ লভ্যতা ও তুলনামূলক কম দাম। পথ-শিশুদের ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এটিও সহজ লভ্য ও সস্তা। ড্যান্ডি সেবনে ক্ষুধামন্দা তৈরি হয়। সামাজিক বাস্তবতা ভুলে থাকা যায়, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়া যায় বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, নিজেকে পরিচালনা করার সক্ষমতা, সক্রিয়তা ও মনোযোগ, বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং সামাজিক আচরণ এই পাঁচ বিষয়ের ভিত্তিতে অল্প বয়সী মাদকসেবীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ণয় করা হয়েছে গবেষণায়। তাতে দেখা যায় ৫৫ শতাংশই মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে স্বাভাবিক নেই। ৬৪ শতাংশ নিজেকে পরিচালনা করার মতো সক্ষম নয়। মানসিক স্বাস্থ্যের বিবেচনায় বাগেরহাট, কুমিল্লা, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁয় মাদকসেবীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মাদকসেবীদের নিয়ে গবেষণা কারণ হিসেবে বলা হয়েছে মাদকের কারণে অল্প বয়সীদের স্বাস্থঝুকি ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা চিহিৃত করে তাদের মাদকাশক্তি থেকে ফেরানোর উপায় খোঁজা।
গবেষণায় সারাদেশের ১২ হাজার ৬০০ পথ-শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এরমধ্যে ৯২৮ টি শিশু বলেছে তারা মাদক সেবন করে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ পথ শিশু মাদকসেবী। এই ৯২৮ জনের মধ্যে ৩৩৬ জন শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদকের বাহক হিসেবেও কাজ করে। শতাংশের হিসেবে ৭২১। সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় পথ-শিশুদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। তাই তাদের খুব সহজে প্রভাবিত করা যায়। দরিদ্রের কারণে তাদের খুব সহজে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই যারা তাদের ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পথ-শিশুদের সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে এনে তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা ব্যসরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়। তাই উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় ভাবে নিতে হবে। তা না হলে এ সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। পথ শিশুদের মাদকের ছোবল থেকে বাঁচাতে হবে। সুস্থ সুন্দর নিরাপদ ভবিষ্যৎ তাদের দিতে হবে।