দেশে মানুষের বড় দুটি উৎসব দুই ঈদ এলেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। এটি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে যে ঈদকে ঘিরে পণ্যের দাম বাড়াতেই হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ফের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এরইমধ্যে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। যেমন- এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চাল, পেঁয়াজ, মসলাজাতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ধর্মীয় কোনো উৎসব উপলক্ষে যেখানে পণ্যসামগ্রীর দাম কমানো হয়, সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র পরিলক্ষিত হয় আমাদের দেশে। এখানে বাড়তি মুনাফা পকেটস্থ করার দুরভিসন্ধিতে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, যা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। করোনা মহামারিতে দেশে অধিকাংশ ভোক্তার আয় কমেছে। অথচ এর বিপরীতে খাদ্যপণ্যের দাম কমেনি; বরং তেল, চাল, আটা, চিনি, দুধসহ সব ধরনের পণ্যমূল্যের উল্লম্ফন ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে এবং তাদের আয়ের বেশিরভাগ অর্থ খাদ্যপণ্য কেনায় ব্যয় করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিুআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায় বোধ করেন। অথচ এ বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বললেই চলে। বস্তুত বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই-এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশে উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই; একইসঙ্গে অপরাধও। এবারের ঈদেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে একই অপতৎপরতা, যা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত। ব্যবসায় মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে মুনাফা অর্জনের নামে নীতি-নৈতিকতাহীন কর্মকা- সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা নীতি-নৈতিকতা মেনে চললে বছরের অধিকাংশ সময় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ঈদের আগে মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, এই ব্যবসায়ীরা জনস্বার্থকে মোটেই গুরুত্ব দেন না। তাদের এমন আচরণ ও কর্মকা- অযৌক্তিক ও অমানবিক বলে মনে করি আমরা। লোকঠকানোর মানসিকতা পরিহার করে এবারের ঈদে মসলাসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রেখে আন্তরিকতার পরিচয় দেবে ব্যবসায়ী সমাজ, এটাই মানুষ দেখতে চায়।