দুই বছর করোনা মহামারির কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রথযাত্রা উৎসব। ১জুলাই শুক্রবার ১ম রথযাত্রার মধ্যদিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ভোগবেতালে বিকাল ৩ ঘটিকায় রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসব থাকবে সপ্তাহ ব্যাপী। ৯ জুলাই শনিবার উল্টো রথযাত্রার মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই উৎসবের। হিন্দুদের দেবতা গোপীনাথ জিউর বিশেষ বাহন রথে চড়ে তার আদরের বোন শুভদ্রাকে স্বামীর বাড়ী থেকে বাপের বাড়ী বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুভদ্রার ভাই বলরাম রথ চালিয়ে গোপিনাথ জিওর বাড়ীতে আসেন। নয় দিন পর উল্টো রথে চড়ে শুভদ্রা ফিরে যান স্বামীর বাড়ীতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের এ বিশ্বাস থেকেই কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব। কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের ভোগবেতালে ঈশাখাঁ ও রাজা নবরঙ্গ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ৫শ বছরের পূরনো ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখরায় শুক্রবার ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার প্রথম পর্ব উদযাপিত হবে। উল্টোরথ আগামী ৯ জুলাইয়ের মাধ্যমে শেষ হবে। কথিত আছে ১৪৮৫ খৃ: সালে গোপীনাথ জিউর রথের গোড়াপত্তন হয় রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে। পরবর্তীতে আখড়ায় ২শ একর জমি দান করেন ঈশাখাঁ। তবে আখড়ার গোড়াপত্তন কে করেছিলেন এ ব্যাপারে কোন নির্ভযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। রথযাত্রা উপলক্ষে কটিয়াদী গোপীনাথ জিউর আখড়া প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ভক্ত সমর্থকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে আখড়া এবং এর আশ-পাশ এলাকা। আখড়া এলাকায় লোকজ মেলা, বিভিন্ন ফল এবং বসে পাখির পসরা। মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় ধর্মীয়সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। উৎসব মুখর পরিবেশে নানা ধর্মীয় আচারাদি শেষে হিন্দু রমনীদের অবিরাম উলধ্বনির সাথে বিশালাকৃতির রথের চুড়ায় স্থাপন করা হয় গোপীনাথ বলরাম শুভদ্রার মূর্তি। রথের চাকার সাথে বাধা লম্বা পাটের দড়ি বা কাঁচি ধরে সামনে থেকে হাজার হাজার ভক্ত নারী-পুরুষ রথ টানা শুরু করেন। পরিপাটি করে সাজানো কৃত্রিম ঘোড়াটানা বাহন যাত্রা শুরু করে শুভদ্রার পিত্রালয়ের পানে। এ সময় হাজারো কণ্ঠের উলুধ্বনি, খোল, করতাল, ঢাক-ঢোল ও ব্যান্ডের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। মন্দিরের নিজস্ব রথ সড়ক দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। বিরাটাকৃতির রথ একসময় পৌছে যায় শুভদ্রার বাবার বাড়ীতে।
কিশোরগঞ্জ-২, কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ জানান, রথযাত্রা উৎসব মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও এলাকার ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ রথযাত্রা উপভোগ করেন। প্রায় ৫শ বছরের পূরনো এই রথযাত্রা কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে বরাবরই সার্বজনিন উৎসব হয়ে উঠে।