রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ১৬৪তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ২০২১ ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কোনো পুলিশ সদেস্যর অপরাধের দায় গোটা বাহিনী নেবে না। অপরাধী সেই ব্যক্তিকেই নিতে হবে। তাই দেশপ্রেম নিয়ে পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে জনগণের কল্যানেই কাজ করতে হবে। পুলিশ এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে জনগণ সংক্ষুব্ধ হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে অনুষ্ঠিত নবাগত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানই নয়, বাংলাদেশ পুলিশ একটি গৌরবের নাম। দেশের সার্বিক কর্মকা-ে বাংলাদেশ পুলিশের আত্মত্যাগ অপরিসীম। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমন এবং স্বাধীনভাবে সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ইতিমধ্যেই পেশাদারিত্ব ও সাহসীকতা দেখিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। তাই পুলিশ বাহিনী কোনো খারাপ কাজ করে গণমাধ্যমের শিরোনাম না হয়ে সাফল্যগাঁথা ও অর্জনের মাধ্যমেই সংবাদের শিরোনাম হতে চায়।
তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই এ দেশের পুলিশ বাহিনীকে জনগনের পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। তিঁনি ১৯৭২ সালের ৯ মে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। বর্তমান সরকারের সময় আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের পুলিশের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে এ বাহিনীর জন্য বাজেট বৃদ্ধি ও সাংগঠনিক কাঠামোতে ক্যাডার পদসহ বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশের আধুনিকায়নে অপরাধী সনাক্তকরণ ও মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের লক্ষে সাইবার সেন্টার, ডিএনও ল্যাব, পুলিশ সদস্যদের কল্যানের জন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের সেবা জনগনের কাছে পৌছাতে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ প্রধান আরও বলেন, জনগনের মাঝে সঠিক সেবা দিতে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজ পরিবর্তনশীল তাই বর্তমানে অপরাধের ধরনও পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য পুলিশ বাহিনীর মাঝে আধুনিকতা নিয়ে আসা হয়েছে। একইভাবে অন্যন্য দেশের মত আমাদের দেশেও তাৎক্ষনিক সেবা পেতে ৯৯৯ চালু করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই সুফল বয়ে আনায় এ সেবাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশের চাকুরী অন্য চাকুরীর মত নয়, এই চাকুরীর মাধ্যমে আমরা দেশের ১৮ কোটি জনগনের নিরাপত্তা প্রদান করি এবং সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিত করি। যাতে করে দেশে অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংগঠিত হয়। দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ভবিষ্যতেও করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে, প্রধান অতিথি পুলিশ একাডেমিতে পৌছালে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক বিপিএম এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন আইজিপি। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। ছয় মাস মেয়াদী এ প্রশিক্ষণে টিআরসিদের মধ্য থেকে আইন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি নির্বাচিত হন বিশাল (টিআরসি নং-২৩৯৩৩৫)। আর মাঠ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি নির্বাচিত হন সিয়াম সিদ্দিকী সাগর (টিআরসি নং-২৩৯০২৪)। প্যারেডে মোট ৪৫৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে আইজিপি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং টিআরসিদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ শেষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক এবং আইজিপি পতœী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী বেগম জীশান মীর্জা, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফকরুল ইসলাম, চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হকসহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন আমাদের চারঘাট প্রতিনিধি সজিব ইসলাম।