উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অব্যবস্থা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিষয়টি বহুল আলোচিত। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যেমন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত, তেমনি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরিতেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টিও নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে বারবার সংশোধন করেও প্রকল্পের গলদ দূর হবে না, দুর্বলতা থেকেই যাবে। এমনই অবস্থা হতে যাচ্ছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক খসড়ায় এ প্রকল্পের প্রায় সাত ধরনের দুর্বল দিক এবং চার ধরনের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে-বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাড়াকর্মীদের সম্মানি ও ভাতার পরিমাণ কম। এ ছাড়া স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। দুবার সংশোধন করেও এ প্রকল্পের গলদ দূর করা যায়নি। বিশেষ করে এর ক্রয় পরিকল্পনা ও পাড়া কেন্দ্র নির্মাণে নকশা প্রণয়নের অভাব ছিল। এ অবস্থায়ই আগামী বছরের জুনে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। ফলে প্রকল্পটি টেকসই হবে কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আর টেকসই না হলে তা হবে অর্থের অপচয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্যও পূরণ হবে না। আইএমইডি ইতঃপূর্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছিল। এগুলোর অন্যতম হলো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা, আলোচ্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে যা হয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সময় নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হন না। প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের কারসাজি থাকার অভিযোগও রয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে আগে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল; সেগুলোর অধিকাংশ এখনো বহাল রয়েছে, যা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। সেই সঙ্গে দেখতে হবে, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে কিনা এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা। আমরা আশা করব, আলোচ্য প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার এখনো যে সময় বাকি আছে, তার মধ্যেই ত্রুটিগুলো যথাসম্ভব দূর করতে সচেষ্ট হবেন সংশ্লিষ্টরা।