আমার রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সূত্রতায় অবিরাম মানুষের সাথে পথ চলতে-কথা বলতে হয়। আর সেই ধারাবাহিকতায় আলোর জন্য-ভালোর জন্য নিবেদিত আমার প্রতিটি ভোর; দোর খুলে সেই ভোরে আসে সাহসের দিন। প্রতিটা দিন আমি মায়ের মত দেশকে ভালোবেসে শুরু করি মায়ের সন্তানদের কল্যাণে নিরন্তর রাজপথে কথা বলা-পথচলা। জানি না সেই ১৯৯৫ সাল থেকে কাজপথে-রাজপথে থেকে কতটা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকতে পেরেছি, তবে জেনেছি- ছাত্র-যুব-জনতার জন্য নিবেদিত থাকাটাই হলো ধর্ম-মানবতা-সমাজ-সভ্যতায় বিশ^াসী সত্যিকারের মানুষের কাজ। সেই কাজের সুবাদে দেশে সড়ক-রেল-নৌ ও আকাশপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৭ থেকে সেভ দ্য রোড নামক একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে পথচলা শুরু করি। সেই ধারায় বলতে চাই- দেশের কল্যাণ মানেই আমাদের কল্যাণ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিরন্তর উন্নয়নের কান্ডারি হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ধারাবাহিকতায় আমাদের গর্বের অহংকারের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন, তখন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া অংশে পদ্মা সেতুর টোল ঘরের অদূরে সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন এলাকায় গাড়ির ধাক্কায় পথচারী অজ্ঞাত বৃদ্ধা (৬৫) নিহত হয়েছে। এর আগে অবশ্য বেপরোয়া বাইক চালিয়ে ভিডিও করার সময় দুর্ঘটনায় আহত হন ৩ জন; তাদের মধ্যে ২ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন করা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে নির্মম পথ দুর্ঘটনায় আমাদের ৩ জন নাগরিকের এ মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বাইকারদের বেপরোয়া গতির কারণে কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে বাইক নিষিদ্ধ করেছে সাময়িক সময়ের জন্য, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নিতে পারতো কঠোর শাস্তি ও জরিমানার; তা না করে এমন পদক্ষেপে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে ৩৭ লক্ষ ৫২ হাজার নিবন্ধিত মোটর সাইকেল-এর মালিক; যারা ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্বকে সমৃদ্ধ করছে।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে! গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির ঈদে বাড়ির পথে যাওয়া মানুষের চরম ভোগান্তির কথা। ফেরিতে করে লক্ষ লক্ষ মোটর সাইকেল পাড়ি দিয়েছিলো পদ্মা; আর তাতে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে; এবারও যেন সেই ভোগান্তি এসে কড়া নাড়ছে মধ্যবিত্ত বাইক রাইডারদের ভাগ্যের দুয়ারে। সেভ দ্য রোড, বাইক নিষিদ্ধ আদেশ প্রত্যাহার চায়; পাশাপাশি চায় সচেতনতা; সরকারের কঠোর শাস্তি ঘোষণা; প্রয়োজনে নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাইক চালানোর জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ জরিমানা এমনকি ৬ মাস সাজাও ঘোষণা করা যেতে পারে। আইনের সংস্কৃতি-বিচারের সংস্কৃতি তৈরি হলে বাইক রাইডারই নয়; সকল বাহনের চালকগণ নিয়ম মানবে বলে বিশ^াস করি। এবার ঈদ উল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানীর পশুর হাট, ফুটপাত দখল করে দোকান স্থাপনসহ বিভিন্ন সংকট থেকে উত্তরণ ও দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য সেভ দ্য রোড-এর সুপারিশগুলো হলো-
১. যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধে পুলিশ-প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রয়োজনে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে জরিমানা, শাস্তি প্রদান করা
২. বাস বে ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করার জন্য সচেতনতা এবং বাধ্য করতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা
৩. ফুটপাত দখলের কারণে মহাসড়কে দু-তিন কিলোমিটার যানজট দীর্ঘ হচ্ছে যেহেতু, সেহেতু আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং স্থানিয় নেতাদের হাত থেকে ফুটপাত মুক্ত করতে বিভাগ-জেলা-উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ নোটিশ জারি করা।
৪. ২০৫ কিলোমিটারের ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটার অপ্রশস্ত সড়ককে ঈদের আগে যথাসম্ভব যানজট মুক্ত রাখার পাশাপাশি ঈদের পরপরই রাস্তা প্রশস্থকরণে বিশেষ উদ্যেগ গ্রহণ।
৫. পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রাস্তায় দক্ষিণাঞ্চলমুখী ২১ জেলার সব যানবাহনে নির্মম পথ দুর্ঘটনা বা যানজট যেন না থাকে, সে জন্য কোরবানীর পশু বহনকারী ট্রাক-পিকআপগুলোর পাশাপাশি সকল বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. সড়ক-মহাসড়কে যেহেতু সর্বোচ্চ ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কে চলতে হয়; সেহেতু দুর্ঘটনা ও যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে; ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে ওভারটেকিং বন্ধ এবং সকল রকম পরিবহনকে স্বাভাবিক গতিতে বাহন চালাতে বাধ্য করা।
৭. সড়ক-মহাসড়কের আশেপাশে কোরবানীর পশু বিক্রি, জবাইসহ সকল প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৮. ২ হাজার ৫২১ টি বেহাল সড়ককে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে সংস্কার করতে উদ্যেগ নিতে হবে।
৯. স্থানিয় ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের চাঁদাবাজীর সূত্রতায় গড়ে ওঠা সড়ক-মহাসড়কের অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদে প্রশাসনের কার্যত ভূমিকা রাখতে হবে।
১০. ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবহন থামিয়ে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ব্যক্তিদের চাঁদাবাজী বন্ধ না হলে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে না সাধারণ মানুষ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পাশাপাশি সারাদেশে যোগ হয়েছে ঈদ উল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানীর পশুর হাট উৎসব। এই উৎসবের কারণে পশু ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। সেই কোরবানীর পশুর খাদ্য-পাটি-কাঠের গোড়াসহ বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রির পসরা সাজানো হবে ফুটপাতে। চিরচেনা জ্যামের নগরীতে নাকাল নগরবাসীকে আরো একধাপ সইতে হবে চরম কষ্ট। অবশ্য এই কষ্ট থেকে উত্তরণে ট্রাফিক বিভাগ, পুলিশ-প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে কঠোর নিয়মের কথা জানিয়ে এবং সেই নিয়ম না মানলে শাস্তির বিধান ঘোষণা করলে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে আমরা মনে করি। ২১ টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে সেভ দ্য রোড গবেষণা সেল ধারণা করছে- ঈদ উল আযহায় এবার নাড়ির টানে বাড়ি যাত্রায় ঢাকা ছাড়ার সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে ঢাকা নিজেই। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানজট এমনিতেই যেন স্বাভাবিক এক ঘটনা। কোরবানির ঈদে সেটি আরো বেড়ে যায় অস্থায়ী পশুর হাট ও পশুবাহী যানবাহনের চলাচলের কারণে। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হবে পদ্মা সেতু অভিমুখী যানবাহনের ঢাকা থেকে বের হওয়ার চাপ। সব মিলিয়ে এবার ঈদ যাত্রায় ঢাকা থেকে বের হতে বিড়ম্বনা পোহাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সেভ দ্য রোড-এর গবেষণা সেল। তবে ঢাকা থেকে বের হতে পারলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো আর কোনো ঝক্কি ছাড়াই পদ্মা সেতু পেরিয়ে গন্তব্যে যেতে পারবে। সড়কের পাশাপাশি ঈদ যাত্রায় বরাবর আলোচনায় থাকে রেল, লঞ্চ ও ফেরিঘাট; এবার আলোচনা থাকবে, সাথে যোগ হবে ভয়ংকর ভোগান্তির সমালোচনা। কারণ, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরি চলাচলে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঈদকে কেন্দ্র করে তা আরো বাড়বে।
এটা কিন্তু অনুমেয় যে, আমাদের অহংকারের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ বাস সেতু দিয়ে পদ্মা নদী পারি দেবে। এতে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী বাসের চাপ বাড়বে রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান এলাকায়। পদ্মা সেতুতে যাওয়ার জন্য এসব এলাকার বাস মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) উঠবে। আবার ওই পথ ব্যবহার করার জন্য গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালের বাসও ঢাকার মধ্য দিয়ে ওই সব এলাকায় যাবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হবে ছোট ও ব্যক্তিগত গাড়ি। আর ঢাকার মধ্যে নিয়মিত চলা যানবাহন তো রয়েছেই। আবার যারা নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা ছাড়বে তাদের চাপও পড়বে এসব এলাকায়। এ ছাড়া যোগ হবে পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, মেরাদিয়া বাজার, কমলাপুর স্টেডিয়াম, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাটের চাপ। সব মিলিয়ে ঈদ যাত্রায় ঢাকা থেকে বের হওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। একথা সত্য যে, ঢাকার রাস্তাগুলো অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এটা ভাবনার বিষয়। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকার পোস্তগোলা, হানিফ ফ্লাইওভার, বাবুবাজার এলাকায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে। এ সময়টায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে।’ এই পথে যেহেতু নতুন রুট তৈরি হয়েছে, তাই এখন বাসের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তবে আশঙ্কা সৃষ্টি করবে ব্যক্তিগত গাড়ি। দক্ষিণাঞ্চলে যারা লঞ্চে যেত তাদের অনেকেই এবার আবেগের বশে ছোট ছোট গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি যাবে। ফলে ঢাকার ভেতরে ছোট গাড়ির চাপ অনেক বাড়বে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর এবারের ঈদ যাত্রায় চার মহাসড়কে বড় ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দিনা চৌরাস্তার জাগ্রত চৌরঙ্গি মোড় পার করে ঢাকার দিকে এগোলেই ভোগড়া পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া চান্দনা চৌরাস্তা উড়ালপথের খুঁটির ভিত তৈরি করার জন্য খোঁড়া গর্তের কারণে যান চলাচলের পথ ছোট হয়ে এসেছে। তৈরি হচ্ছে যানজট। ঈদ যাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা ভোগান্তির কারণ হতে পারে। সেই সাথে মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে বরাবরের মত চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুরার তায়রুননেছা মেডিক্যাল কলেজ ও মিলগেটে ফ্লাইওভারের কাজ চলার চরমতম কষ্টতো পোহাতেই হবে বাড়ির পথে যাওয়া অসংখ্য মানুষকে।
দেশে সড়ক-নৌ-আকাশ ও রেলপথে বারবার যে সংকট-সমস্যা নির্মাণ হয়েছে, তার অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্টদের দক্ষ-নীতিবান ও যথাযথ পদক্ষেপের অভাব। এই বিষয়গুলো উত্তরণে তাদের যেমন নীতিগত অবস্থান প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সচেতনতা আর সতর্কতার সাথে পথ চলাচল। তা না করে যেহেতু গত ঈদে মহাসড়কে মোট দুর্ঘটনার মধ্যে বেশির ভাগ ছিল মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক; সেহেতু মোটর সাইকেল চালকদের সতর্ক বা শাস্তি বাড়ানোর বিষয়ে কোনরকম নিদের্শনা ছাড়াই হুট করে বিশে^র সকল দেশের রীতি ভেঙ্গে মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এই সিদ্ধান্ত এক রকমের আত্মঘাতি ও দায় সাড়া। আগেই বলেছি- আত্মাপ্রকাশের পর থেকে আকাশ-সড়ক-রেল ও নৌপথকে দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক একমাত্র স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড বিভিন্ন কর্মসূচি, গবেষণা ও ক্যাম্পেইন করে আসছে। একই সাথে তেলের দাম বা ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ যেমন জানিয়েছি, তেমনি জনগনকে সচেতন করেছি ফুটওভার ব্রীজ, ফুটপাত ব্যবহারসহ নিয়ম মেনে পথ চলতে। করোনা পরিস্থিতিতে চালক-যাত্রীদের মাঝে স্যানিটাইজার-মাস্ক বিরতণ কর্মসূচিও পালন করেছি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবা হিসেবে। যার অর্থ যোগান দিতে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ ব্যয় থেকে সঞ্চয় করার অর্থ এখানে যুক্ত করেছি। শুধু এখানেই শেষ নয়; বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে বিআরটিএ করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করলে সেভ দ্য রোড এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। পরে অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখছি- প্রায় প্রতিদিন নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পথ দুঘর্টনায়। দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য সেভ দ্য রোড মাত্র ৭ দফা হলো- ১. বঙ্গবন্ধু ফুটবল লীগের খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়কপথ দুর্ঘটনায় নিহত অর্ধশত শিশু-কিশোর-এর স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়কপথ পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ৭. স্পিড গান, সিসিটিভি ক্যামেরা, ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে নতুন করে কাউকে প্রাণ দিতে না হয়। একই সাথে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাবো বিশে^র উন্নত দেশগুলোর মত সারাদেশে সড়কপথে স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য ‘শিক্ষা সার্ভিস’ কার্যকর ভাবে চালুর উদ্যেগ নিন। সেক্ষেত্রে নৌপথে নৌ বাসও চালু করার আহ্বান জানাচ্ছি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে। সড়কপথে দুর্ঘটনা কমাতে সরকার, পরিবহন মালিক ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের যৌথ উদ্যোগে চালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাকে কার্যকর করার অনুরোধ জানাচ্ছি। যাতে করে পথ হয় লক্ষ্যে পৌছার, নিহত বা আহত হওয়ার মাধ্যম নয়। আমাদের সুপারিশ চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর (ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ) ও হেল্পারসহ সকল পর্যায়ের পরিবহনকর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, লাইসেন্স, মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র প্রদান, কর্মঘন্টা নির্ধারণ, উৎসব বোনাস ও ওভারটাইম ভাতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বেপরোয়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সড়কপথ, মহাসড়কপথ ও আঞ্চলিক সড়কপথগুলো ডাবল লেন ও ৪ লেনে উন্নিতকরণসহ নিয়মিত সংস্কার, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সতর্কীকরণ নোটিশ জারির সাথে ফুটপাতকে দখলমুক্ত করতে হবে। সকল পথের সকল বাহনে ‘যাত্রীবিমা’ এবং যাত্রী ও পণ্যবাহী সব গাড়িতে চালক, কন্ডাক্টর ও হেল্পারের জীবন বিমা চালু করতে হবে। সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে বলতে চাই- এই পথকে শান্তি ও সমৃদ্ধির করে গড়ে তুলতে একের পর এক ফ্লাইওভার বা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ নয়; রাস্তা প্রশস্ত ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারিদের চলাচল উপযোগি করার দাবি বরাবরের মত জানাচ্ছি। পরিবহনে নারী ধর্ষণ-নির্যাতন-নিপীড়নও বেড়েছে গত কয়েক দশকে; উত্তরণে প্রয়োজন সচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ। নেতৃবৃন্দর উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে সাইকেল লেনসহ বাহন অনুযায়ী আলাদা আলাদা লেন নির্মাণেরও দাবিও সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে, একজন নিবেদিত থাকা দেশকর্মীর পক্ষ থেকে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি।