গাজীপুরের কালীগঞ্জে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করায় তুমুলিয়া ইউনিয়নের এক দফাদারকে হত্যার পর লাশ গুমের হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। অপরদিকে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমান ওই মেম্বারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার (২১ জুন) ভুক্তভোগী দফাদার বাদী হয়ে অভিযুক্ত মেম্বার ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছে (নাম্বার ১০০৬)। ভুক্তভোগী দফাদার তুমুলিয়া ইউনিয়নের টিউরি এলাকার মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে করিব হোসেন (৫০)। তিনি ৬নং ওয়ার্ডের দফাদার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। অভিযুক্তরা হলো, তুমুলিয়া ইউনিয়নের বর্তুল এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মাহাবুব (৪৫) এবং তার ভাই হাবিবুর (৩৫)।
থানা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম থানার দুই কনস্টেবল এবং দফাদার কবিরকে সঙ্গে নিয়ে গত রোববার দিবাগত মধ্যেরাতে ওয়ারেন্টভূক্ত তিন আসামি গ্রেপ্তার করতে সিএনজি দিয়ে বর্তুল এলাকায় অভিযানে যায়। সে সময় দফাদার খোঁজ নিয়ে পুলিশকে জানায় পলাতক আসামি ৮নং ওয়ার্ডের উত্তর সোম এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে এমারত (৩৮) এবং ৯নং ওয়ার্ডের ইছাপুরা এলাকার সেরাজুলের ছেলে সিয়াম (৩০) মেম্বার মাহাবুবের বাড়ীতে অবস্থান করছে। পরে তারা মেম্বারের বাড়ীর সামনে পৌঁছে দেখে আসামিরা রাস্তায় অবস্থান করছে। সে সময় দফাদার আসামীদের শনাক্ত করে পুলিশকে সহায়তা করে। পুলিশ সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে এবং অপর আসামি পালিয়ে যায়। পরে মেম্বার মাহবুব ও তার ভাই এসে দফাদারের কাছে জানতে চায় কেন আসামি ধরিয়েছে এবং দফাদারকে গালাগালি করে। এছাড়াও পুলিশকে আসামি গ্রেপ্তার করতে বারণ করে তারা।
দফাদার জিডিতে উল্লেখ করেন, “গত ১৯ জুন দিবাগত মধ্যরাতে ৯নং ওয়ার্ড থেকে ওয়ারেন্টভূক্ত তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে সহায়তা করি। পরবর্তীতে ওই বিষয়কে কেন্দ্র করে ওইদিন আনুমানিক রাত ১টার দিকে বর্তুল এলাকায় থাকা অভিযুক্তদের বাড়ীর পাশে আমাকে একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে অভিযুক্তরা। আমি প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে বলে বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।”
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মাহাবুব বলেন, “দফাদার আসামীদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবী করেছিল। টাকা না দেয়ায় ওইদিন রাতে পুলিশ নিয়ে আসে। আমি দফাদারকে শুধু বলে ছিলাম আসামীদের আমার বাড়ীর পাশ থেকে না ধরে অন্য কোন স্থান থেকেও ধরতে পারতেন। এছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসামীদের পক্ষে পুলিশকে অনুরোধ করে ছিলাম যদি কোন সুযোগ থাকে তাদের অন্য কোন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করার জন্য।”
তিনি আরো বলেন, “এরপর কালীগঞ্জ থানার ওসি ফোন করে আমাকে বলেন আমি কয় নাম্বার মেম্বার হয়েছি তিনি তা দেখে নিবেন। পরে জানতে পারি দফাদার আমার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে।”
দফাদার কবির হোসেন বলেন, “পুলিশ আসামি নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওই দিন রাতে মেম্বার মাহবুব ও তার ভাই হাবিবুর আমাকে গাল-মন্দ করে এবং হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছি। আসামীদের কাছে টাকা চাওয়ায় বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট।”
কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, “ওই দিন রাতে মেম্বার মাহবুবের বাড়ীর সামনের রাস্তা থেকে ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। দফাদার কবির হোসেন আসামি গ্রেপ্তার করতে আমাদের সহায়তা করেছে। পরে শুনেছি মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হয়েছে। বিস্তারিত ওসি স্যার জানেন।
মেম্বারকে দেখে নেয়ার বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমানের ব্যবহৃত সরকারী মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য: এর আগে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর তুমুলিয়া ইউনিয়নের বোয়ালী এলাকায় কর্তব্যরত অবস্থায় গ্রাম পুলিশের এক সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।