নাগেশ্বরীতে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, পেশি শক্তির দাপট, ভিজিএফ ও ভিজিডির মাল আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ১১ জন ইউপি সদস্য রেজুলেশন করে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা গত ১২ জুলাই সংশ্লিস্ট সকল দপ্তরে একটি লিখিত আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন তদন্তে গেছেন উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে ওয়ার্ড সদস্যদের কোন প্রকার পাত্তা না দিয়ে নিজের ইচ্ছামত সবকিছু একাই করে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে তিনি বিভিন্নভাবে আমাদের ভয়ভীতি দেখান। কোন বরাদ্দের বিষয়ে আমাদেরকে অবগত না করে তিনি একাই সিদ্ধান্ত নেন। সরকারি বিধিবিধান না মেনে তিনি একাই সুকানদিঘী (নয়ারহাট) নামে নতুন হাটের ইজারা প্রদান করেন। অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় করে কোষাগারে জমা না করে সেই ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। সরকারি গেজেটে প্রকৃত নাম ৯নং ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ থাকলেও তিনি তার ইচ্ছামত নাম পরিবর্তন করে আলোকিত ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ হিসাবে ঘোষনা এবং প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। ঈদণ্ডউল-আযহার পুর্বে তালিকা ভুক্ত দু সহস্্রাধিক দু:স্থ মানুষকে ভিজিএফের চাল না দিয়ে তা আত্মসাৎ করেন। তার আক্রোশ থেকে রক্ষা পায়নি দু:স্থ মোসলেমা (ভিজিডি কার্ড নং ১৯২)। গত ৫ মাস থেকে চেয়ারম্যান তাকে ভিজিডির চাল দেন না। এছাড়াও গত জুন মাসে ২৩৪ ভিজিএফ কার্ডধারীর মাল তিনি আত্মস্মাতের চেষ্টা করলেও সুবিধাভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। পরে বাধ্য হয়ে ৩ জুুলাই তিনি ওই মাল বিতরণ করেন। এ রকম অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফলে চেয়ারম্যানের অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধে এবং হতদরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অপসারণের দাবিতে আমরা বৈঠক করে রেজুলেশনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯,৩৪ এর ৪ (ঘ) ধারার আলোকে ৩৯ ধারা অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করি। বৈঠকে উপস্থিত থেকে ওই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুল বাতেন, ২নং ওয়ার্ড সদস্য গয়ানাথ রায়, ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন ব্যাপরী, ৪নং ওয়ার্ড আবুল ফারুক মিঠু, ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান, ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস আলী, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য সাইফুর রহমান, ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আমিনুল ইসলাম, ৯নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ ওয়ার্ড মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগম, সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ ওয়ার্ড মহিলা সদস্য নওরোজ জাহান। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহমেদ মাছুম জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা পষিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সরেজমিন তদন্তে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। অভিযোগকারীরা উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের তারিখ পুননির্ধারন করে ১৯ জুলাই করা হয়েছে। এর বাইরে তদন্তের অন্যান্য কাজ চলমান আছে।
চেয়াম্যান শফিউল আলম শফি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। মেম্বারদের অনৈতিক আবদার পুরণ করতে না পারায় আমি পরিস্থিতির স্বীকার। আমার চেয়ারম্যান হিসাবে এখনও ৬মাস বয়স হয়নি। কাজেই সরকারি নীতিমালা মোতাবেক ৬মাস পূর্তির আগে এ অনাস্থা প্রস্তাব অগ্রহনযোগ্য।