ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে ছিনতাই করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মী। মঙ্গলবার দিনগত রাতের এই ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত কর্মী দেশীয় অস্ত্র (রামদা) হাতে সাংবাদিকদের খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে টিএসসিসিতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের অফিসে ঢুকে যায়। পরে তাকে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ।
অভিযুক্ত রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ সময় তার সাথে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মাহবুব, ফিন্যান্স এ- ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাসিন আজাদ ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আসাদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও গতকাল রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন।
জানা গেছে, গতকাল আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে জয়পুরহাট থেকে খুলনায় ট্রাকে করে সরিষার তেলের কন্টেইনার নিয়ে যাচ্ছিলেন ড্রাইভার মামুন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করার জন্য দাঁড়ান। এ সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক নিয়ে সেখানে এসে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী কাব্য ও আল আমিন। পরে তারা ড্রাইভারের কাছে গাঁজা আছে কিনা তা জানতে চান। একই সঙ্গে দশ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ড্রাইভার ও তার সহকারীকে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেন তারা। এ ছাড়া গাড়ির কাভারের তালা খুলে দুটি তেলের কন্টেইনারও বের করেন। পরে লোকজন জড়ো হলে তেল রেখে টাকা ও ট্রাকের চাবি নিয়ে সেখান থেকে চলে যান কাব্য ও আল আমিন।
পরে প্রধান ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মী বিষয়টি সিকিউরিটি অফিসার আবদুস সালাম সেলিমকে জানালে তিনি সেখানে আসেন। তবে তিনি বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালেও ঘটনাস্থলে আসেনি কেউ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভুক্তভোগী মামুন ইবি থানায় গেলে এসআই সাইফুল ঘটনাস্থলে আসেন।
ইবি থানার এসআই সাইফুল বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। অভিযুক্ত ছাত্ররা হলে ছিলো কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তো আমরা হল থেকে তাদের ধরতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি রাতে সমাধান করতে বললেও তারা সকালে সমাধান করবেন বলে জানান।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা অভিযুক্ত রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্যের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, গাঁজা থেকে বড় বড় জিনিসের বয়স পার করে আসছি। গাঁজা আমার কাছে কোনো ফ্যাক্ট না।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী কাব্যসহ কয়েকজন ভ্যান নিয়ে অস্ত্রহাতে সাংবাদিকদের খুঁজতে থাকে। সন্ধ্যা হতে প্রায় ২ ঘণ্টা তাদের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। পরে কাব্য অস্ত্রহাতে সাংবাদিকদের অফিসে টিএসসিসিতে ঢুকে যায়। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে সাংবাদিক অফিসের পাশ থেকে রামদা উদ্ধার করা হয়৷ পরে তাকে ঘটনাস্থল হতে অস্ত্রসহ আটক করে ইবি থানা পুলিশ। এই কাব্য ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহের সাথেও জড়িত বলে জানা গেছে।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় হতে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একইসাথে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কোনভাবেই এই অন্যায়ের ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলছে।