সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’কে খুনের রাজনীতি ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন করেছে ইউপিডিএফ এর নারী সংঘ হিল উইমেন ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি।
বুধবার (২০ জুলাই) সকালে শহরের পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অফিসের সামনে সংগঠনের নেতা কর্মীরা ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় নেতাকর্মীরা সন্তু খুনের রাজনীতি বন্ধ কর, 'খুনী সম্ভর শাস্তি চাই', 'সন্তু, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ কর', 'সন্তু, আর কত রক্ত চাই তোমার?', 'সন্তু, আর কত মায়ের বুক খালি করবে তুমি?' ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা। এ সময় দপ্তর সম্পাদক এন্টি চাকমা ছাড়াও জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সন্তু লারমার কড়া সমালোচনা করে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা লিখিত বক্তব্যে বলেন, চারিদিকে এত ভূমি বেদখল হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছিত অত্যাচারিত অপমাণিত হচ্ছে। এত নির্যাতন চলছে। তারপরও আপনি তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত না করে কেন ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখেছেন, আমরা তার উত্তর চাইতে এসেছি।'
চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তার জন্য আন্দোলন না করায় নীতি চাকমা সন্তু লারমার সমালোচনা করে আরো বলেন, আপনি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের কথা বলেন, আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার কথা বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আপনার এসব কেবল কথার কথা, আপনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করেন না, বরং আন্দোলনের বিরোধীতা করেন, যারা আন্দোলন করতে চায়, তাদের বাধা দেন, তাদেরকে খুন করেন। আপনি গদি রক্ষার জন্য নিজের দলের কর্মীদের বলি দিচ্ছেন, সাধারণ জনগণকে বলি দিচ্ছেন, জুম্ম জাতিকে জিম্মি করে রেখেছেন। তবে মনে রাখবেন এজন্য ইতিহাস আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। জুম্ম জাঁতি আপনাকে ক্ষমা করবে না।
সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের খুনের রাজনীতির জন্মদাতা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের জনক বলে দাবি করে এ সময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সংঘাত বন্ধ করে চুক্তি বাস্তবায়নের কর্মসূচি ঘোষনা করুন। আমরা তাতে সমর্থন দিব। ভূমি বেদখলের, নারী ধর্ষণ ও অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ এর সাথে মিলে আন্দোলনের কর্মসূচি দিন। 'আপনি বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফের সাথে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছেন। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারীতে খাগড়াছড়ির হারাঙহিয়া সমঝোতা, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সমঝোতা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারীর সমঝোতা জেএসএস লঙ্ঘন করে আমাদের কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করছেন বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
গত ২৪ বছরে ইউপিডিএফের ৩৩৫ জন নেতা কর্মী ও সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে কেবল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের হাতে ২৬২ জন খুন হয়েছেন বলে বক্তারা উল্লেখ করেন এবং সন্তু লারমাকে প্রশ্ন করেন, 'আর কত জনকে হত্যা করলে, আর কত রক্ত ঝরলে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে আপনি ক্ষান্ত হবেন?'
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়রম্যান পদ হতে সন্তু লারমকে অপসারন ও গ্রেফতারের দাবিও জানান।
হিলউইমেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীতি শোভা চাকমা ও দপ্তর সম্পাদক এন্টি চাকমা ছাড়াও জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।