চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেওয়ায় এলাকাবাসীর উপর বালু উত্তোলনকারী সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে ১১ জন গুলিবিদ্ধ ও ২ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মোহনপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীর নাছিরাকান্দি মৌজায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
আহতরা হচ্ছেন, মুন্সিগঞ্জের কালিয়ারচরের মৃত রহম আলী বেপারির ছেলে জাহান উদ্দিন (৪২), মৃত ওহাব আলী গাজীর ছেলে আমিন উদ্দিন গাজী, মৃত নূরুল ইসলাম মল্লিকের ছেলে শহিদুল হক মোল্লা (৬০), আবুল খালাসীর ছেলে আমিনুল হক (৩৩), কবির মিয়াজির ছেলে রিয়াদ মিয়াজি (১৮), জসিম উদ্দিন বেপারির ছেলে নিরব বেপারি (১৮), নাছির হোসেনের ছেলে মামুন (১৮), রফিক ঢালীর ছেলে রবিন ঢালী (১৮), মতলব উত্তরের মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়াজির ছেলে জাহিদ হোসেন (২১), নূর মোহাম্মদের ছেলে আবু সাইদ (১৮), মারজান গাজীর ছেলে মুছা গাজী (২৭)। এদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেলে হাসপাতালে ও মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এলাকাবাসী ও নৌ পুলিশ জানায়, মতলব উত্তর উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জের সদরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। এই নদীর মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নাছিরার চর মৌজায় নদী থেকে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে বালু উত্তোলন করছেন মতলব উত্তরের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মিজান, মুন্সিগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার ইউপি সদস্য নাছির উদ্দীন।
২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মতলব উত্তরের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মিজান, মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল হোসেন বিপ্লব, চরকেয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন ভূঁইয়া ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার নাছির মেম্বারের সমর্থকরা কয়েকটি ড্রেজার নিয়ে ওই স্থানে বালু উত্তোলন করছিলেন।
এসময় নাছিরারচর এলাকাবাসী তাদেরকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেন। কিন্তু সব বাঁধা উপেক্ষা করে তারা বালু কাটছিল। এতে বাঁধা দিলে মুন্সিগঞ্জের কালিরচরের সরাফত মেম্বারের ছেলে হেলাল (৩২), রবিউলের ছেলে নাজমুল ঢালী (২৮), নিজাম উদ্দিনের ছেলে রানা (৩০), বিল্লাল হোসেনের ছেলে জুম্মান (২৫), একই গ্রামের শাহিন ভূঁইয়া, মতলব উত্তরের মোহনপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের মৃত আবুল কাজীর ছেলে মতিন কাজী (৩২), দশানি গ্রামের মান্নান বেপারীর ছেলে আরিফ বেপারী (৩৫), একই গ্রামের আরিফ ছৈয়াল (৪০), রিপন ছৈয়াল (৪২) সহ আরো ১২/১৩ জন সন্ত্রাসী এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় এবং এতে গুলিবিদ্ধ হন ১১ জন।
গুলিবিদ্ধের বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. স¤্রাট বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে কিছু লোক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। কিছু ভর্তি আছে এবং কিছু ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ঘটনা নিশ্চিত করে গুলিবিদ্ধ জাহান উদ্দিন বলেন, যে স্থানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নাছিরা কান্দি। সন্ত্রাসীরা আমাদের একটি নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। এতে ২ জন নিখোঁজ রয়েছে।
আহত আমিন উদ্দিন গাজী বলেন, এটা আমাদের গ্রাম ছিল। যা মেঘনা নদী ভেঙে নিয়ে গেছে।
শহিদুল হক মোল্লা নামে আরেকজন বলেন, মতলব উত্তরে বালু কাটার কোন অনুমতি নেই। আমাদের জায়গা রক্ষা করতে গেলে তারা আমাদের লক্ষ করে গুলি করে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তিনি বলেন, আমরা লিজকৃত মুন্সিগঞ্জের এলাকায় বালু কাটছিলাম। তারা ড্রেজারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর মোহনপুর নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বালু উত্তোলন করার সময় একদল লোক বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরে জানাবো।
এ ঘটনায় মতলব উত্তর থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান কামাল বলেন, এ পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।